মোঃ হিমেল মোল্যা, নড়াইল প্রতিনিধি ঃ কোন সিনেমা বা গল্প নয়। সাপের কামড়ে একটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে চলছে তোলপাড়। স্থানীয় ডাক্তাররা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করলেও কবিরাজে শিশুটিকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় রাত ৮ টা পর্যন্ত মৃত শিশুর পরিবারে চলেছে দৌঁড়ঝাঁপ। অথচ কাফনের কাপড় দিয়ে মোড়া শিশুর লাশ। জানাজা শেষ। কবর খোঁড়াও শেষ। কবরের পাশে কবরের মাচালের বাঁশ রাখা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। কবরে লাশ নামানোর প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় নড়ে-চড়ে উঠলো শিশুটি। মুহুর্তেই দাফনে নিয়োজিত মানুষেরা ওই লাশ নিয়ে ছুটলো কবিরাজের উদ্দেশ্যে। অথচ মঙ্গলবার সকালেই হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে বেঁচে নেই শিশুটি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এ্যাম্বুলেন্স এ করে শিশুটিকে নিয়ে তার আতœীয়-স্বজনেরা পরিচিত এক কবিরাজের বাড়িতে রওনা হলো। এ ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিংগা গ্রামে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌরসভার সিংগা গ্রামের ওহিদুজজ্জামানের মেয়ে সিংগা মশাঘুণি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী নিতু ওরফে মিতু খানম (৯) কে গত সোমবার (৩ আগষ্ট) গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে কামড় দেয়। তখন নিতুর মা-বাবা বুঝতে পারেননি যে, মেয়েকে সাপে কেটেছে। ধারণা করেছেন স্বপ্নে ভয় পেয়েছে সে।
তাই মঙ্গলবার (৪ আগষ্ট) সকালে নিতুকে নেয়া হয় ঝাঁড়-ফুঁকের জন্য স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। হুজুর পানি পড়া দেন। কিন্তু রাত থেকেই নিতুর শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শিশুটি। তখন বাবা মায়ের খেয়াল হয় ঘরের যেখানে মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল সেখানে সাপের গর্ত। খেয়াল হয় মেয়ের হাতে হালকা কামড়ের দাগ। তখনই তাদের ধারণা হয়ে যায় মেয়েকে সাপে কামড় দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে অচেতন অবস্থায় প্রথমে লোহাগড়া হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার অভিভাবকরা স্থানীয় এক ওঝার কাছে নেওয়ার পথে নিতু খানমের মৃত্যু হয়।
নিতুর চাচাতো ভাই তারেক আজিজ বলেন, নিতুর ডান হাতে ছোট্ট কামড়ের দাগ ছিলো।
রাজুপুর গ্রামের প্রত্যদর্শী যুবক তাজমুল বলেন, হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণা করার পরও আমি থানা মোড়ে নিতুকে নিঃস্বাস নিতে দেখেছি।
লক্ষ্মীপাশা পৌর কবরস্থানে তাকে কবর দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মারকাজুল মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে লাশ কবরে নামানোর পূর্ব মূহুর্তে নিতুর শ্বাস-প্রশ্বাস লক্ষ্য করে উপস্থিত ব্যাক্তিরা। মুহুর্তেই তারা ওই লাশ নিয়ে ছুটে যান হাসপাতালের দিকে। কিন্তু এমন সময় ওই পরিবারের পূর্ব পরিচিত এক কবিরাজ (হুজুর) ফোনে নির্দেশ দেন বিকাল ৫টার আগে নিতুকে দাফন করা যাবে না এমনকি হাসপাতালেও নেয়া যাবে না। নিতু বেঁচে আছে। নির্দেশ দেয়া হয় দ্রুত কবিরাজের বাড়িতে নিযে যাবার। পরে অভিভাবকেরা মোবাইলে ওই কবিরাজের সাথে কথা বলে কবিরাজের কথা মতো শিশুটিকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ওই কবিরাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
এদিকে, মিতুর বেঁচে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে এক নজর দেখার জন্য সাধারণ মানুষ ভীড় জমায় কবর স্থানের সামনে। কবিরাজের বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হলেও পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭ টায় শিশুটিকে নেয়া হয় নড়াইল সদর হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের জানান, নিতুর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। ওই কথা শুনে তারা নিতুর লাশ নিয়ে আবার ফিরে আসে সেই কবরস্থানেই। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গত মঙ্গলবার সকালে লোহাগড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার নাজমুন নাহার (বুবলি) বলেন, এ ঘটনা আমি শুনেছি কিন্তু হাসপাতালে এমন কোন রোগী নিয়ে কেউ এসেছিলো তা আমার জানা নাই।#### (ছবি সংযুক্ত)