রায়হান রহমান(৩৮)। ১৭ বছর ধরে রাজধানীতে মিনিবাস চালান তিনি। তার কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এখন তিনি যে মিনিবাস চালান সেটিরও ফিটনেস নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ অভিযান তাকে মিনিবাসসহ বুধবার আটক করা হয় বনানী এলাকায়। আটকের পর তিনি প্রিয়.কমকে জানান, কীভাবে দিনের পর দিন পুলিশকে ঘুষ দিয়ে রাজধানীতে গাড়ি চালিয়েছেন।
রায়হান রহমান এতোদিন ভুয়া ড্রাইভিং দিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। আর বলাকা নামের ফিটনেসবিহীন যে মিনিবাস নিয়ে তিনি আটক হয়েছেন তার নম্বর ঢাকা মেট্রো-জ, ১৪-২৫৯৫।
রায়হান জানান, ‘রাজধানীতে বাস চালাতে গেলে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদা দিতে হয়। বাস মালিকরা বিভিন্ন খাতে টাকা দিয়ে গাড়ি রাস্তায় নামায়। রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে শ্রমিক পক্ষ বা মালিক পক্ষ একটি চাঁদা ধার্য করে। যার একটি অংশ পুলিশকে দেওয়া হয়’।
তবে এর বাইরে রাস্তায় বের হলে কোনো কারণে পুলিশ গাড়ি ধরলে পুলিশকে খুশি করতে হয়। এই খুশি করার প্রক্রিয়া কি জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘টাকা ছাড়া তাদের খুশি করার প্রক্রিয়া আর কি আছে বলেন?’
তিনি জানান,‘ গাড়ির দোষ থাকলে, লাইসেন্স না থাকলতো পুলিশকে চাঁদা দিতেই হবে।’
দেশ ডিজিটাল হয়নি দাবি করে আটক বাসচালক জানান, ‘ট্রাফিক পুলিশকে এখন আর সরাসরি টাকা দিতে হয় না। তারা এখন ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় চাঁদা নিয়ে থাকেন।’ এই চাঁদা রাজধানীর প্রায় প্রত্যেককেই দিতে হয় বলেও তিনি দাবি করেন।
ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরাসরি চাঁদা না নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ এখন লোকের মাধ্যমে চাঁদা নেয়। কখনো কখনো কেন্দ্রীয়ভাবে মালিকদের কাছ থেকে নেয়।’
এই অভিযোগের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার আবু ইউসুফ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বুধবার বনানী এলাকায় ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মশিউর রহমানের নেতৃত্ব পরিচালিত অভিযানে বাসচালক ও সহকারিসহ ১০টি ফিটনেসহীন গাড়ি আটক করা হয়।
আটক গাড়ির মধ্যে একটি কাভার্ড ভ্যানকে মালামাল থাকায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিগুলোর মধ্যে মিরপুর-গাজীপুর রুটের কনক পরিবহনের একটি বাসা, আজিমপুর-গাজীপুর রুটের ভিআইপি ২৭ নম্বরের তিনটি বাস, গুলিস্তান–আব্দুল্লাহপুর রুটের তিন নম্বরের তিনটি বাস এবং একই রুটের বলাকা পরিবহনের আরও দু’টি বাসকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান বলেন, ‘ফিটনেস ঠিক না থাকা এবং এসব গাড়ির বিরুদ্ধে আগের একাধিক মামলা থাকায় মোট নয়টি বাসকে ডাম্পিংয়ে পাঠানোর হয়েছে।
এদিকে, ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হাওয়ায় রাজধানীতে যাত্রিবাহী বাস চলাচলের সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ধারণা করা হয় রাজধানীসহ সারা দেশে কমপক্ষে ১০ লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়ি আছে। আর সরকারি হিসাবেই দেশে কমপক্ষে তিন লাখ ৩৯ হাজার গাড়ির ফিটনেস নেই। এ ধরনের গাড়ির মধ্যে কমপক্ষে ৯৫ হাজার গাড়ি চলছে রাজধানীতেই।
আর ভুয়া লাইসেন্স আছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ।