‘তুই আমাকে ফোন দিছিস কেন? তুই নিউজ করছস পারলে আরো কর, তুই আমার কিছুই করতে পারবি না। তুই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যা কিংবা রাষ্ট্রপতির কছে যা। তোর কাজ তুই কর, আমি নিজেকে ট্যাকেল দিচ্ছি।’ -এভাবেই বলছিলেন বাংলা মুভি এসকে টিভির মালিক মুন্সী জিয়াউদ্দীন। সংবাদমাধ্যমকে আন্ডারগ্রাউন্ড টিভি সমাচার শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এসব বলেন।
সম্প্রতি এই টিভিসহ ১২টি ভুয়া চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে রোববার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার দুপুরে মুন্সী জিয়াউদ্দীন সঙ্গে কথা হয়। তিনি নিজেকে সাপ্তাহিক নগরবার্তা পত্রিকার মালিক বলে পরিচয় দিয়ে দেন। প্রতারণার প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি এভাবে হুঙ্কার ছাড়েন।
রোববার ও সোমবার চ্যানেলগুলোর কার্যালয়ের সন্ধানে বের হয়ে কোনো কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, অভিযুক্ত টিভি চ্যানেলগুলোর কার্যালয়ের ঠিকানা দ্রুত পরিবর্তন হয়। ডোমেইনে থাকা ঠিকানায় গিয়ে কোনো চ্যানেলের কার্যালয় বা সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। বারবার ঠিকানা পরিবর্তন করায় সহজেই প্রতারণা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বাংলা মুভি এসকে টিভির ডোমেইন কিনে কাজ শুরু হয় নাবিস্কো এলাকায়। সোমবার সেই ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, অনেক আগেই টিভির কার্যালয় পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে জিয়াউদ্দীন বারিধারা এলাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জিয়াউদ্দীন ডোমেইন কেনার সময়ও ভুল ঠিকানা দিয়েই প্রতারণার আশ্রয় নেন। এছাড়াও একাই কিনেছেন চারটি ডোমেইন। বাংলা মুভি এসকে টিভি ছাড়াও নিয়েছেন বাংলা মুভি টিএস.টিভি, এ বাংলা মুভি.টিভি এবং এসকে বাংলা.টিভি নামে চারটি ডোমেইন ক্রয় করেছেন।
গত বছর বড়ুয়া মনোজিত ধীমন নামের এক ব্যক্তি চ্যানেল ফাইভ নামের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে। কিন্তু কিছুদিন পরই সেটার প্রচারণা বন্ধ করেন তিনি।
কিন্তু থেমে যাননি তিনি। চ্যানেল ফাইভ বন্ধ করে দিলেও ডিএম টিভি এবং ফিল্মি বাংলা টিভি নামের আরো দুটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন ক্রয় করেন। ৩৩৩, নিউ এলিফেন্ট রোডে কার্যক্রম শুরু করেন ফিল্মি বাংলা টিভির। কিন্তু সেখানেও তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি তার অবস্থান। ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, সেখানে তিন মাসের মতো অবস্থান করে ছিলেন তিনি।
একই ভবনের তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া বারেক নামের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই ভবনের চতুর্থ তলায় ফিল্মি বাংলা টিভি নামের একটি টিভির কার্যক্রম শুরু করেন ধীমন। তবে কিছুদিন কাজ করার পর বাড়িওয়ালার সাথে সমস্যার কারণে ওই স্থান ত্যাগ করেন তিনি।’
ফিল্মি বাংলা টিভির নামে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে তিনি কী ধরনের কাজ করতেন, সে বিষয়ে কিছু জানার সুযোগ ছিল না বলে জানান বারেক।
তবে প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমকে-এর কাছে বড়ুয়া মনোজিত ধীমন দাবি করেন, চ্যানেল ফাইভ ও ডিএম টিভির মালিক তিনি নন। চ্যানেল ফাইভের প্রচার হতো সিঙ্গাপুর হতে। তিনি বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউটর নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রতারণার অভিযোগে অনুমোদনহীন প্রায় ডজনখানেক টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে প্রতারণা, অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত চ্যানেলগুলো হচ্ছে- বাংলা মুভি এসকে টিভি, বাংলা মুভি টিএস টিভি, এ বাংলা মুভি টিভি, চ্যানেল ফাইভ, ফিল্মি বাংলা টিভি, সিটিজি টিভি, চ্যানেল-৭, ডিএম টিভি, বাংলা মিউজিক টিভি, এসবি টিভি, সিটিএন টিভি এবং রং টিভি।
এসব টেলিভিশন চ্যানেলের নামে ডোমেইন কিনে অনলাইনে প্রচার চালাতো। এদের বিরুদ্ধে নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগের পাশাপাশি যৌন রোগের অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও বিজ্ঞাপনের তৈরির নাম করে মডেল হতে আগ্রহী তরুণীদের সঙ্গে প্রতারণা করত। চাকরি দেয়ার নাম করে তরুণ-তরুণীদের কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এসব চ্যানেলের বিরুদ্ধে।