বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার পৌরসভার অর্ন্তগত ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুস্তুম আলীর বড় মেয়ে মেধাবী ছাত্রী ফারজানা (১৯) অদম্য প্রচেষ্টায় সফলতা পেয়েছে। সে পাথরঘাটা চৌধুরী মাসুম টিবিএম কলেজ থেকে এইচ এস সি (ভোকেশনাল) ২০১৫ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবা অত্যান্ত ধর্মভীরু হওয়ায় ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকা কালিন অবস্থায় যৌতুক দিয়ে ২৬ মে ২০১০ বাল্য বিবাহ দেয়। আর কয়েক মাস না পেরতেই ফিরে আসে বাবার বাড়িতে; কিশোরী মন তার সামলতে পারেনি সংসার নামক জগদল পাথরের ভার। মাকে বলে আমি আর যাবনা ঐ স্বামীর বাড়িতে; ওরা আমাকে জ্বালা যন্ত্রনা দেয় এবং মারধর করে। আবার শুরু করে স্কুলে যাওয়া। কিন্তু স্বামী নামধারী মানুষ নামের অমানুষটি তাকে আবার ফিরিয়ে নিতে জের চেষ্টা চালায়। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাকে পথ আগলে ধরে অনেক সময়। বাবা রুস্তম যৌতুকের টাকা এবং বিচারের জন্য মামলা করে। ফলে ১২ মার্চ ২০১৪ সালে সন্ধ্যা বেলা ছোট বোনটিকে নিয়ে ঘরে পড়ছিল হঠাৎ বোরকা পরা এক ব্যাক্তির দ্বারা এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয় দু-বোনই।
বেসরকারী সংস্থা সুশীলন সংগঠিত উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ(এসভাউ) কমিটি থানা প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার করে এবং ঐ রাতেই সুশীলনের একজন কর্মীর সাথে ঢাকায় এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনে নিয়ে ভর্তি করে। এরই মধ্যে এসে যায় তার ৩এপ্রিল,২০১৪ এইচএসসি(ভোকেশনাল) ১ম বর্ষের বোর্ড পরীক্ষা। উপজেলা প্রশাসনের সাথে এসভাউ কামিটি আলোচনা করে বেডে পরীক্ষার ব্যবস্থ করে এবং আবার ফিরে যায় চিৎকসার জন্য ঢাকায়। তারা সহযোগী সংস্থা সুশীলন ও সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে বিক্ষোব র্যালি, মানববন্ধন ও প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে এবং মামলার ভার গ্রহন করে চলমান রেখেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রশাসন আসামী গ্রেফতার করে। সুশীলনের সহায়তা দীর্ঘ ২ মাস চিকিৎসার পর ফিরে আসে। কিছুদিন যেতে না যেতেই বাবা তাকে আবার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু সে কোন ভাবেই রাজি হয়নি তারঁ পণ সে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মত মানুষ হবে। কিন্তু বাবা কোন ভাবেই রাজি না হয়ে উপরন্তুু তার লেখাপড়ার খরচ বন্ধ করে দেয়। সুশীলনের এসভাউ কামিটি তার বাবার সাথে আলোচনা করে ভার নেয় তাঁর লেখাপড়ার। একশনএইড বাংলাদেশের সহায়তায় তাঁকে বাস্তবায়িত প্রকল্পের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেচ্ছাসেবক পদে নিয়োগ দিয়ে তাঁর লেখাপড়া চলমান রাখে হয়। সে আজ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নির্যাতিত নারী ও শিশুর আইনী সহাযোগীতা করে যাচ্ছে। সেই ফারজানা চৌধুরী মাসুম টিবিএম কলেজ থেকে আজ এইচ এস সি (ভোকেশনাল) ২০১৫ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণের আশা দেখছে এবং সে একজন আইনজীবি হতে চায়। ফারজানা বলেন, “আমাদের সমাজে দরিদ্র নারী বিশেষ করে নির্যাতিত নারী ও শিশুরা আজ অসহায়, তারা আইনী সহায়তার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং প্রতারিত হয়, আমি একজন ভাল আইনজীবি হয়ে তাদের সহযোগীতা করতে চাই”।