সংবাদদাতা আমতলী ।।
বরগুনার আমতলী তালতলীসহ সমগ্র জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাধঁ নির্মান না হওয়ায় গত কয়েকদিনে পূর্ণিমার জোয়ার ও অবিরাম বৃষ্টিতে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও মহাসেন বরগুনার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার আঘাতে বরগুনাসহ পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলী, বামনা,বেতাগীর সকল উপজেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ী স¤পূর্ণ বিধ্বস্ত ও এসব এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মানকৃত বেড়িবাধঁ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বর্তমানে পানিউন্নয়ন বোর্ড বরগুনা সদর উপজেলার ১৮নং প্যাকেজে পোল্ডার ৪১/৬বি ৮.৩২কিলোমিটার, ৪১/৭বি পোল্ডারে ১.৭১০কিলোমিটার বেড়িবাধঁ নির্মান কাজ চলিতেছে। যার মধ্যে কোন রকম অনিয়ম দেখা যায়নি । নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মান চলছে দ্রুত গতিতে।প্রকৌশলী কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ২৫মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে জেলার ২২টি পোল্ডারের ৮৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার স¤পূর্ণ এবং ৩৯৬ কিলোমিটার বাধঁ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের পর যেসব স্থানের বাধঁ মেরামত করা হয়েছে তা ঠিক রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সংস্কার না হওয়া প্রায় ১০০ কি. মি. বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, পানির অস্বাভাবিক চাপে সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ডেমা গুলিশাখালী, মাঝেরচর ও পাতাকাটা, এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের, ছোট বালিয়াতলী ও পালের বালিয়াতলী, নলটোনা ইউনিয়নের পদ্মা, সোনাতলা, আমতলা ও নিশানবাড়িয়া, ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা, লতাবাড়িয়া, গোলবুনিয়া, মাঝখালী, উত্তর ডালভাঙা ও দক্ষিণ ডালভাঙা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে, পাথরঘাটা উপজেলায় ভাঙা বেড়ি বাঁধ দিয়ে বলেশ্বর নদীর পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে চরদোয়ানি, কাঠালতলী, জ্ঞানপাড়া, পদ্মা, রুহিতা, জ্বিনতলা, বাদুরতলা, কোরালিয়া, নিজ লাঠিমারা, ছোট টেংরা ও গাববাড়িয়া এলাকা।বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদী সংলগ্ন উত্তর বেতাগী, ঝিলবুনিয়া, ছোপখালী, ঝোপখালী, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, কালিকাবাড়ি, গাবতলী, আলিয়াবাদ, জোয়ার করুনা ও গ্রোমর্দন গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ।বুড়িশ্বর নদীর জোয়ারের পানিতে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ভাঙা বেড়ি বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বৈঠাকাটা, ঘটখালী, বেতমোর, চন্দ্রা, উত্তর কান্দা ও বালিয়াতলী গ্রাম। সেইসঙ্গে পৌরসভার আমুয়ার চরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে আমতলী শহর রক্ষা বাঁধ।এছাড়াও বেড়ি বাঁধের বাইরে পায়রা নদী সংলগ্ন তালতলী উপজেলার নিুাঞ্চলের খোট্টার চর, নলবুনিয়ার চর, আশার চর ও তেঁতুল বাড়িয়ার চর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।এসব এলাকায় বেড়ি বাঁধ না থাকায় দিনে-রাতে দুইবার করে প্রায় বুক সমান পানিতে ডুবে যায় গ্রাম।জানাগেছে, ক্ষতিগ্রস্থ অপেক্ষাকৃত নিচু বাঁধ উপঁচে ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধ ভেঙে প্রবল তোড়ে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহুর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তুপে । বরগুনা নিশানবাড়িয়ার এয়াকুব মাঝি জানান, বেড়ীবাধগুলো সংস্কার না করায় আমরা দিনরাত আতংকে থাকি। কখন যেন মহাসেন, সিডর ও আইলার মত ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় আসছে। জানিনা আর কত বছর এই আতংকের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।তালতলী জয়ালভাঙ্গা গ্রামের সোবাহানের স্ত্রী মিনারা বলেন, মহাসেনের আঘাতে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী ১০ বছরেও এ ক্ষতি কাটিতে উঠতে পারবোনা।এতে একদিকে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা অন্যদিকে কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এ অঞ্চলের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কেননা অধিকাংশ এলাকায় বাঁধ না থাকায় অহরহ জোয়াড়ের লবন পানি ঢুকে ফসল ও অন্যান্য সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধেঁর নির্মান কাজ চলছে। অতি শিগ্রই এ দূর্ভোগ থেকে বরগুনার উপকূলের মানুষ বেচেঁ যাবে।