সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। একদিকে এ বছর চামড়ার আমদানি যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে আড়তদারদের সাথে দামে বনিবনা না হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ চামড়া। আর এতে মাত্র একদিনের ব্যবধানে লবণের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তাই চামড়া সংরক্ষণে লবণ সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একে তো বেধে দেয়া মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তার ওপর সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ছাড়াই দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে চামড়ার বড় আড়ত রাজধানীর লালবাগ-পোস্তায় পৌঁছতে। আর সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমছে এসব চামড়ার দামও। এতে লগ্নি করা অর্থও ফিরে পাচ্ছেন না বেশিরভাগ মৌসুমি ব্যবসায়ী। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই চেষ্টা করছেন নিজ উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণের। তবে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চাহিদাকে পুঁজি করে লবণের দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে এবারও বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তমালিকরা। ব্যবসায়ী জানান, সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ না করায় গতবছরও ঈদ মৌসুমে নষ্ট হয়েছিল ৩০ শতাংশের বেশি চামড়া। অন্যদিকে, সিলেট, খুলনা ও বরিশালসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও চলছে কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই চামড়া আড়তগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। পচন ঠেকাতে লবণ ছিটানোর পর আড়তগুলোতে অন্তত ১০দিন চামড়া স্তূপ করা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংগ্রহ করছেন আড়তদাররা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চামড়ার দামও গতবারের তুলনায় কম বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের। আর দাম কম হওয়ার কারণে চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সিলেটে শনিবার সকাল থেকে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। শহরের ঝালোপাড়ার অস্থায়ী আড়তে সংগ্রহীত চামড়ায় লবণ ছিটিয়ে তা জড়া করা হয়। এর আগে, অপ্রয়োজনীয় মাংস ও চর্বি অপসারণের পর পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করেন শ্রমিকরা। এদিকে, আজো চামড়া সংগ্রহ চলবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনার শেখপাড়া এলাকায় গতকাল মধ্যরাত থেকে শুরু হয় চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাজ। ডেটল বা স্যাভলন মেশানো পানি দিয়ে চামড়া পরিষ্কারের পর তাতে ছিটানো হয় লবণ। এদিকে, গতকালের মতো আজও শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহের পর তা জড়ো করা হয় সেখানে। তাছাড়া রাজশাহীতেও চলছে কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাজ। শনিবার ভোর থেকেই শহরের শালবাগান এলাকার চামড়াপট্টিতে জড়ো থাকা চামড়ার ওপর লবণ ছিটাতে ব্যস্ত রয়েছেন সেখানকার শ্রমিকরা। নষ্ট হওয়ার হাত থেকে চামড়া রক্ষায় প্রথম ধাপ শেষে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ধাপের কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এদিকে বরিশালের পদ্মা এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে চামড়া শ্রমিকদের। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহীত চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাজ শুরু হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। তবে, এবার আশানুরূপ চামড়া সংগ্রহ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, রংপুর ও ময়মনসিংহের চামড়া আড়তগুলোতে চলছে চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কাজ।