কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ কটিয়াদী উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে জালালপুর ও লোহাজুড়ি ইউনিয়ন দুটিকে ৩৭ বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদ উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। তাই সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদে বাঁধ দিয়ে বসলেন গ্রামবাসী। তাতে বৃহৎ এই নদটি কটিয়াদীতে এসে দুই ভাগ হয়ে পড়ে। আর প্রকৃতিকে শাসন করার ফল হিসেবে ভৈরব থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র এখন মৃতপ্রায়। ফলে ভৈরব, মেঘনা নদী ও পশ্চিমে আড়িয়ালখাঁ নদের সঙ্গে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার ভৈরব মোহনা থেকে শুরু হয়ে দেওয়ানগঞ্জ গিয়ে মিলিত হওয়া নদটি পুরনো ব্রহ্মপুত্র হিসেবে পরিচিত। এটি কটিয়াদীতে এসে মূল শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কটিয়াদী অংশে নদটি প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত। নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুই ইউনিয়নবাসীকে মূল শহরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার ভাবনা থেকে ১৯৭৮ সালে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম গোলাপ মিয়া ও মসুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আ. রহমান। ব্যয় নির্বাহ করা হয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অর্থ থেকে। সে সময় এ বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে প্রশাসন ছিল নীরব ভূমিকায়। কেন বাঁধ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে শামসুল আলম গোলাপ মিয়া বলেন, ফেরি পারাপারের সময় নৌকা ডুবত। ঘর-জমি সব কিছু নদে বিলীন হতো। তখন আর কী করা, বাঁধ দিয়ে দিলাম। এদিকে এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় কটিয়াদীর প্রাণচাঞ্চল্য ছিল ব্রহ্মপুত্রকেন্দ্রিক। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ আমল থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে ভৈরব ও কটিয়াদী ব্যবসাকেন্দ্র ও বন্দর হিসেবে পরিচিত। মেঘনা নদীর কল্যাণে ভৈরব টিকে থাকলেও ব্রহ্মপুত্র মরে যাওয়ায় কটিয়াদী খ্যাতি হারিয়েছে। একই কারণে পাটের মোকাম হিসেবে কটিয়াদীর বিশেষ খ্যাতিও আজ সংকুচিত হয়ে এসেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষি, মৎস্যসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান স্বীকার করেন ব্রহ্মপুত্রের মরি মরি অবস্থার জন্য বাঁধটিই দায়ী। এ বিষয়টি তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনবেন। প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই বাঁধের কোথাও সেতু বা কালভার্টের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এক সময়ের কাঁচা বাঁধটি এখন পাকা সড়ক। চলছে ছোটবড় যান। নদের জায়গা দখলে নিয়ে দুই পাড়ে অসংখ্য দোকান ও ভবন গড়ে উঠেছে। বিচ্ছিন্নতার কারণে এই বর্ষা মৌসুমে এক প্রান্তে পানি থাকলেও আরেক প্রান্ত শুকনো। বাঁধের দুই পাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে সড়কটির পরিচয় হিসেবে ‘কটিয়াদী নদ বাঁধ’ লেখা আছে। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন ৩৮টি পাকা-কাঁচা ঘর ভেঙে দেয়। প্রশাসনের দাবি, এটি নদের সম্পত্তি, সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত, তাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। নতুন করে কেউ স্থাপনা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কটিয়াদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম জাকারিয়া।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, নদের নাব্যতা ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছি। নদটিকে ভৈরবের মেঘনার সঙ্গে যুক্ত করে সরাসরি নৌ চলাচলের ব্যবস্থার উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে গাজীপুরের টোক থেকে কটিয়াদীর চরমান্দালিয়া পর্যন্ত নৌ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৫৪৮ কোটি টাকার খনন কাজ শুরু হয়েছে।