বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার চেউরিয়ায় লালন ফকির যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সেই লালন আখড়াকেই কলকাতার বোড়ালে মূর্ত করে তোলা হয়েছে কালীপূজার মণ্ডপে। দক্ষিণ কলকাতার বোড়ালের বাদামতলায় বসবাস পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের। এদের মধ্যে আবার কুষ্টিয়ার মানুষই রয়েছেন প্রচুর। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার মানুষের মধ্যে কুষ্টিয়া ও লালন ফকিরকে নিয়ে সহজাত আবেগ রয়েছে। সেই আবেগকে সম্বল করে এবার নেতাজি সংঘ লেকপল্লী উন্নয়ন সমিতি পুজোমণ্ডপ তৈরি করেছে লালন আখড়ার অনুকরণে। মণ্ডপের লালন আখড়াকে ঘিরে গ্রামের পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে গত চার মাসের পরিশ্রমে। সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ দে জানিয়েছেন, গ্রামের পরিবেশ তৈরি করতে লাঙল দিয়ে চাষ করে ধান ও পাট লাগানো হয়েছে। কাটা হয়েছে পুকুর। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাঁস। ফুটেছে পদ্ম ও শাপলা। রয়েছে নানা ধরনের মাছ। চারদিকে লাগানো হয়েছে ৫৪ ধরনের সবজি ও ফলের গাছ। আখড়ার পাশেই রয়েছে হাঁস, মুরগি, পায়রা, ছাগল পালনের ব্যবস্থা। পূজার উদ্যোক্তাদের মতে, বাউল সম্রাট লালন ফকিরকে শ্রদ্ধা জানাতেই তাদের এই প্রয়াস। নিখুঁতভাবে লালন আখড়ার পরিবেশ তুলে ধরেছেন শিল্পী মধু কর্মকার। তিনি জানিয়েছেন, লালন আখড়ার পরিবেশ গড়ে তোলার কাজটি ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। শহরের বুকে যে এক চিলতে গ্রাম তৈরি করার কাজটি কঠিন ছিল সেকথা মানছেন উদ্যোক্তারাও। আখড়ার পরিবেশ তৈরি করতে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া থেকে এসেছেন প্রায় ২৩ জন বাউল। একতারা বাজিয়ে গান গাইবার জন্য রয়েছে বিশাল চাতাল। তবে এরই মাঝে মা কালীকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে টালির চালার মণ্ডপে। মূর্তিতেও রয়েছে অভিনবত্ব। মূর্তিটি তৈরি হয়েছে শুধু বাঁশ দিয়ে। আর মণ্ডপের চাল থেকে ঝুলছে সত্যিকারের লাউ ও কুমড়ো। দুই বাংলার মেলবন্ধনের এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়াস দেখিয়েছেন বোড়ালের মানুষ।