মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রান আপ সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে তিনশোর আশা জাগিয়েও ২৭৬ এ থেমে গেলো বাংলাদেশের ইনিংস। তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েসের ১৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটির পর শেষের দিকে রিয়াদ এবং মাশরাফির ঝড়ো ইনিংসে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৭৬/৮।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি। সিরিজে এই প্রথম টস জিতলেন তিনি। মিরপুরে ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় বেলা একটায়। এদিন দুই দলই শেষ ম্যাচের একাদশ নিয়ে মাঠে নামে।
বাংলাদেশের প্রথম দশ ওভারে রান ছিল ৪৭, বিশ ওভারে সেটা ৯০, পরবর্তী আট ওভারে ১৩৯। এভাবে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে অতিথি বোলারদের পথহারা বানিয়ে ছাড়েন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। দুজনে মিলে ১৪৭ রানের জুটি গড়েন।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হাফসেঞ্চুরি করেন ইমরুল কায়েস। এটি তার ক্যারিয়ারের ১২তম হাফসেঞ্চুরি। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেছিলেন ৭৬ রান। কায়েসের পাশাপাশি তামিমও হাফ সেঞ্চুরি করেন। ইনিংসের ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছয় মেরে ৫০ পূর্ণ করেন তিনি।
ওপেনিং জুটির রেকর্ড থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফিরেছেন ইমরুল কায়েস (৭৩)। ইনিংসের ৩০ তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। চার ওভারের ব্যবধানে ইনিংসের ৩৫ তম ওভারে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে তামিম ইকবালও স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এরই মধ্যে মিরপুরে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
মজার ব্যাপার তামিম এবং ইমরুল দুইজনেই ৭৩ রান করে আউট হয়েছেন। তামিম সাতটি চার মারলেও ইমরুল মারেন ছয়টি চার। কিন্তু তামিম মেরেছেন মাত্র একটি ছয়, অন্যদিকে ইমরুল মেরেছেন চারটি ছয়। দুজনেই আউট হয়েছেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে।
তামিম-ইমরুল বিদায় নেওয়ার পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাস। কিন্তু ইনিংসের ৩৮ তম ওভারে আবারো আঘাত হানে জিম্বাবুয়ে। এবারের শিকার মুশফিকুর রহিম, আর শিকারী ম্যালকম ওয়ালার। অবাক করার মত ব্যাপার হলেও সত্যি মুশফিক প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। আউট হওয়ার আগে মুশফিক করেন ২৮ রান। ২৫ বলে ১১২.০০ স্ট্রাইকরেটে তিনটি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি।
সিরিজের রানের দেখা না পাওয়া লিটন দাস এই ম্যাচেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৪৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্রেমারের শরীরের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি রুম করে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে যান লিটন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে চোখজুড়ানো ক্যাচ নেন উইলিংটন মাসাকাদজা।
লিটন দাস আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমান। কিন্তু মাত্র এক রান করতেই তাকে সাজঘরে ফেরান লুক জোঙ্গে। মাত্র দুই বল পরেই রানের খাতা খোলার আগেই নাসির হোসেনকেও একইভাবে আউট করেন জোঙ্গে।
এরপর দলের হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুজনেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। দলীয় স্কোর ২৫০ পার হয়ে এই দুজনের ব্যাটেই। মাশরাফি তিনটি চারের সাহায্যে মাত্র ৯ বলেই ১৫ রান করেন। ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হন তিনি।
মাশরাফি আউট হয়ে গেলেও হাফসেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। শুরু থেকেই ছিলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক। রিয়াদ মাত্র ৩৮ বলেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩ তম হাফ সেঞ্চুরি।
ইনিংস শেষ হওয়ার মাত্র এক বল আগে রান আউট হয়ে যান রিয়াদ। তবে আউট হওয়ার আগে রিয়াদ করেন ৪০ বলে ৫২ রান। মেরেছেন দৃষ্টিনন্দন ৫টি চার এবং একটি ছক্কা।
শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে আরো একটি উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। আরাফাত সানী অপরাজিত থাকেন তিন রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেটে ২৭৬ রান।
সিরিজে ইতিমধ্যে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আজ জয় পেলে প্রতিপক্ষকে এগারোতম হোয়াইটওয়াশ করার যোগ্যতা অর্জন করবে মাশরাফি বাহিনী।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ১৪৫ রানের। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৮ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ পাঁচ ওয়ানডের চারটিতেই জয় লাভ করেছে মাশরাফিরা।