আমি চেয়েছিলাম, ম্যাচটা বাংলাদেশ হারুক!

হয়তো কেউ চমকে উঠবেন, কেউ হয়তো ‘ফের’ আমাকে গালি দিবেন। কেউ হয়তো শিরোনাম দেখেই লেখাটা এড়িয়ে যাবেন। কিন্তু ব্যাপার হল – সত্যিই, অন্তত ১৩৫ রানে করার পর আমি সত্যিই চেয়েছিলাম, এই ম্যাচটা বাংলাদেশ হারুক।

এবার বিষয়টা আরেকটু পরিস্কার করি।

১৪ ওভার শেষে তিন উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর ৯৮। সেখান থেকে ১৩৪ রানে নয় উইকেটের পতন। মানে মাত্র ৩৬ রান করতে করতেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের রানটা টেলিফোন ডিজিটের মত – ৩, ৮, ০, ৫, ১, ১!

আর বিপরীতে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দিকে তাকান। ৩৯ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও ওরা কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারায়নি। লোয়ার-মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান ম্যালকম ওয়ালার (২৭ বলে ৪০) ও নেভিল মাদজিভা (১৯ বলে ২৮) ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছেন।

আসলে, এখানটাতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। এখানে কারা শক্তিশালী, কারা স্বাগতিক দল কোন ঘটনা না। ক্রিকেটের ফরম্যাট যত ছোট হতে থাকে জয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হতে থাকে ‘আত্মবিশ্বাস’। আত্মবিশ্বাস থাকলেই জয় আসবে।

তার উপর শেষ ওভার নাসির হোসেনের উপর ভরসা রাখার ‘জুয়া’টাতেও এক রকম ব্যর্থ বাংলাদেশ। এরকম মাঝে মধ্যে হতেই পারে, শেষ ওভারে যে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলাররাও ‘প্যানিক’ করেন তার ভুরিভুরি প্রমান পাওয়া যায়।

কেউ হয়তো মুস্তাফিজের ফিফটি-ফিফটি নো বলটাকেও দায়ী করবেন। সেটা একটা কারণ অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু, কোন ভাবেই হারের জন্য মূল কারণ নয়; মূল কারণ হল এই দলটা বড্ড ‘প্যানিক’ করে।

ওয়ানডেতে যে দলটা রীতিমত দম্ভ নিয়ে হাঁটাচলা করে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এলেই কেন যেন সেই মুখগুলো শুকিয়ে এতটুকু হয়ে যায়। কেন এই টি-টোয়েন্টি ভীতি? ঠিক এই কারণেই, মানে এই ভীতির কারণেই, টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে আমরা আফগানিস্তানেরও পরে থাকি।

সমস্যা আমাদের মানসিকতায়, টি-টোয়েন্টির নাম শুনলেই একটা অজানা ভয়, একটা অজানা চাপ কাজ করে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। একটার কথা বলি…

জিম্বাবুয়ে দেয়া ১৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামার পর প্রথম ওভারেই রান আউট এনামুল হক বিজয়। কুইক সিঙ্গেল ছিল, রান হবে কি হবে না, যাকে বলে ফিফটি-ফিফটি চান্স ছিল আরকি। ১৮০ বা ২০০ রানের লক্ষ্য হলে মানতাম, নিজেদের মাটিতে ১৩২ রান তাড়া করতে গিয়ে এই ছেলেমানুষী কেন!

শেষ অবধি ম্যাচটা আমরাই জিতেছিলাম। কারণ, অবশ্যই আমাদের ভাল বোলিং! আরেকটা কারণ হল, জিম্বাবুয়ে আমাদের চেয়েও বাজে ব্যাটিং করেছিল।

আমরা কেন কম খারাপ খেলেছি বলে জিতবো, আমাদের জিততে হবে বাঘের মতন। ওয়ানডেতে যেমন জিতে আসছি, টি-টোয়েন্টিতেও তাই করতে হবে।

এবার প্রশ্ন হল, এই সমস্যা কাটানোর উপায় কি? আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলেন, পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা এই তিনটা দলের বিপক্ষে যখন ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিলাম তখন কি আমরা শক্তিশালী দল হিসেবে জিতেছি?

প্রশ্নের উত্তরটা হল ‘না’। আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী নয়, বরং সবচেয়ে ‘যোগ্য’ দল হিসেবে জিতেছি। আর ওইসব ম্যাচের দিনে আমাদের ‘যোগ্য’ করে দিয়েছে আমাদের আত্মবিশ্বাস। টি-টোয়েন্টিতেও আমাদের এই আত্মবিশ্বাস আসবে, যদি আমরা ওই ‘অজানা’ ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি।

সামনেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। সেটা শেষ হয়ে গেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হাতেগোনা সময়। সমস্যার সমাধানটা এরই মধ্যে করে ফেলতে পারলে, ওয়ানডে বিশ্বকাপের অধরা স্বপ্ন ধরা দিতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *