অতীতের মতো এবারও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দ-িতদের ফাঁসির দ- কার্যকরের খবর গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ মাধ্যম। মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো চীফ এলেন বেরির প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত দুই নেতার ফাঁসি কার্যকর’। এতে ফাঁসির দ- কার্যকরের খবর ছাড়াও কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া নিয়ে দ-িতদের আত্মীয়-স্বজন ও আইনমন্ত্রীর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ও মার্কিন দূতের উদ্বেগ এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্য উঠে এসেছে। বার্তাসংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে মৃত্যুদ- কার্যকরের খবর ছাড়াও দ- কার্যকরের আগ মুহুর্তের বিভিন্ন তথ্য, দ-িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তাদের পরিচিতি, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের উদ্বেগ ও বিতর্ক এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতার বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে নিহত মুক্তিযুদ্ধাদের স্বজন ও দ-িতদের পরিবারের বক্তব্য, বিরোধী দলের ওপর সরকারের কঠোর অবস্থানের বিষয়টিও আলোকপাত করা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ-িতদের প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রেসিডেন্ট প্রত্যাখ্যান করার মাত্র কয়েকঘন্টা পরই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বার্তাসংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে উদ্বেগ ও সহিংসতা সৃষ্টির হুমকি থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দুই প্রভাবশালী বিরোধী নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশেপাশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, জামায়াতের হরতালের ডাক, দ-িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিবরণ, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ফাঁসির দ- বহাল ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের অভিযোগ, ইত্যাদি ছিল এপি’র প্রতিবেদনে। এছাড়া আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধে নিহতদের পরিবারের সুবিচার প্রাপ্তি’ নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান, মানবাধিকার সংস্থা ও মার্কিন বিভিন্ন পক্ষের উদ্বেগ, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার মোটামুটি বিস্তারিত বর্ণনা ছিল এ প্রতিবেদনে। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘টু টপ বাংলাদেশ ওয়ার ক্রিমিনাল হ্যাংড’ (‘দুই শীর্ষ বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি’)। এ প্রতিবেদনে বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক, যুদ্ধকালীন সময়ে দ-িতদের ভূমিকা ও বিভিন্ন সরকারের আমলে তাদের অবস্থান, ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।
মার্কিন আরেক প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের ভারত ব্যুরো চীফ অ্যানি গোয়েনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশে এ দুই জনের ফাঁসি কার্যকরের কারণে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ প্রতিবেদনে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের ব্যাপক সমালোচনা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো হাউস ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটি’র সমালোচনামূলক চিঠির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশী রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি রিয়াজের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। ছিল শাহবাগ আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের ওপর হামলার বিষয়টি। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের খবরে প্রাধান্য ছিল ফাঁসি কার্যকর কেন্দ্রিক বিভিন্ন ঘটনাবলি। মার্কিন পত্রিকা লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের প্রতিবেদনে ফাঁসি কার্যকরের খবরের পাশাপাশি বলা হয়েছে, ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতে ইসলামি প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল। এছাড়া রায় কার্যকরের আগ মুহূর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশেপাশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কারাগার এলাকার সব দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। সরে যেতে হয় কৌতুহলী দর্শনার্থীদের। আল জাজিরা ও গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা এএফপি’র খবর। বিবিসি’র প্রতিবেদনে ফাঁসির বিষয়টি ছাড়াও প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে দ-িতদের আত্মীয়স্বজন ও কর্তৃপক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। ফাঁসি কার্যকর ছাড়াও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দুই দ-িতদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হয়েছে।