যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) দণ্ডিত মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, সব দল ও বাহিনীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ‘ভিকটিমস কম্পেনসেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করতে হবে। এ সময়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সরকার মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। তাদের আদর্শগত ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এ দাবির পক্ষে আইনি ভিত্তি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৭(৩) ও ১০২ অনুচ্ছেদ তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের শতভাগ অনুকূলে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল, রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভিয়া, সাবেক ইয়োগোস্লাভ, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের আইনের উল্লেখ করেন তিনি। সাবেক এই বিচারপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করলে তা সন্ত্রাস ও লবিস্ট নিয়োগে ব্যবহার করবে। ‘জিয়ার বদৌলতে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সাকা-মুজাহিদ বলে গেছে, তাদের অর্থের সাম্রাজ্য থেকে গেছে। এ সাম্রাজ্য ব্যয় হবে সন্ত্রাসী কাজে।’ সরকার তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে সংবিধান অনুযায়ী তারা রিট করার সুযোগ পাবে না বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, মানবাধিকারের অনেক সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অধিকারের কথা বলছে, কিন্তু শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতদের অধিকারের কথা কেউ বলেন না। এখন আমরা তাদের অধিকারের কথা বলছি- যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ ও নির্যাতিত পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হোক। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ব্যক্তি ও দলকে এবং খুনিদের পুরস্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি। শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নির্যাতিতরা রিকশা চালায়, মানুষের বাসায় কাজ করে, ভিক্ষা করে- এটা হতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ডের পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আইসিটি আইনে সংশোধনী আনতে হবে। আগামীতে যাদের বিচার হবে তাদের এ বিধানে যুক্ত করা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জুরিস্ট কানাডা শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাটর্নি উইলিয়াম স্লোন যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ টেনে সমর্থন জানান।