দেশীয় চলচ্চিত্রের ডাকসাইটে নায়ক-অভিনেতা খলিল উল্যাহ খান। অভিনয়ের আলো ছড়িয়েছেন টিভি এবং মঞ্চ নাটকেও। অভিনয় অঙ্গনের এক মহীরুহ ছিলেন তিনি। গত বছরের এই দিনে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান চলচ্চিত্রের সদা হাস্যোজ্জ্বল গুণী এ মানুষটি। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শৈশব মেলা’র প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ দুপুর ২টায় তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মৌন মিছিল এবং সবশেষে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে মোহাম্মদপুর কবরস্থানে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। খলিলের ছেলে মুসা খান জানান, আজ বাদ জোহর পারিবারিক উদ্যোগে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান জানান, আজ বাদ আছর খলিল ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শিল্পী সমিতিতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এ মাহফিলে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে। আটশ’রও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন খলিল। তবে একটিমাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বহু বছর আগে একবারই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চিত্রনায়িকা কবরী প্রযোজিত ও আলমগীর কুমকুম পরিচালিত এ ছবিটির নাম ‘গুণ্ডা’। এ ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর ও কবরীসহ আরও অনেকে। আর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। খলিল অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র কলিম শরাফী ও জহির রায়হান পরিচালিত ‘সোনার কাজল’। নায়ক হিসেবে খলিল অভিনয় করেছেন ‘কাজল’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘জংলী ফুল’, ‘বেগানা’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে। এস এম পারভেজ পরিচালিত ‘বেগানা’ চলচ্চিত্রে প্রথম খলনায়ক হিসেবে খলিল অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা না করলেও দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। একটি ‘সিপাহী’ অন্যটি ‘এই ঘর এই সংসার’। খলিলের জন্ম ১৯৩৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিলেটে। মঞ্চ দিয়েই তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। ‘প্রীত না জানে রীত’ ছবির নায়ক হওয়ার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তিনি শবনমের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবি হলো- ‘সঙ্গম’, ‘পুনম কি রাত’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘উলঝান’, ‘সমাপ্তি’, ‘তানসেন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘নদের চাঁদ’, সোনার কাজল’, ‘অলংকার’, ‘মাটির ঘর’, ‘পাগলা রাজা’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘বেঈমান’, ‘আগুন’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘কন্যা বদল’, ‘যৌতুক’, ‘আয়না’, ‘মাটির পুতুল’, ‘আওয়াজ’, ‘নবাব’, ‘সোনার চেয়ে দামি’, ‘বদলা’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘আয়না’, ‘মধুমতি’, ‘ওয়াদা’, ‘ভাই ভাই‘, ‘বিনি সুতোর মালা’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সুখে থাকো’, ‘অভিযান’, ‘পুনর্মিলন’, ‘কার বউ’, ‘বউ কথা কও’, ‘দিদার’, ‘দ্বীপকন্যা’, ‘সুখের ঘরে দুঃখের আগুন’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘বাপ বড় না শ্বশুর বড়’ ইত্যাদি। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি খলিল টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বিশেষ নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আবদুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’। এ নাটকটি বিটিভিতে প্রচার হয়। ‘সংশপ্তক’-এর মিয়া চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ‘মিয়ার বেটা মিয়া’ হিসেবে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে ছোট পর্দার দর্শকদের মুখে মুখে। অভিনয়ে পুরোদস্তুর ব্যস্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশ আনসারের কর্মকর্তা ছিলেন খলিল।