সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির কারণে সংসদীয় কার্যক্রম ধুঁকে ধুঁকে চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বর্জনের প্রবণতায় নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ‘বাংলাদেশের শাসন পরিস্থিতি ২০১৪-১৫’ সংক্রান্ত বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে সংসদ ও নির্বাচন কমিশন ছাড়াও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ ব্র্যাক ইন সেন্টারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট সৈয়দা সেলিনা আজিজ ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গবেষণায় বলা হয়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন প্রায় ৪০ ভাগ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তা বেড়ে ৫০ ভাগের কিছুটা বেশি দাঁড়ায়। ২০০১ সালে ৬০ ভাগের কাছাকাছি এবং ২০০৯ সালে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ৬০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী এবং পরাজিত দলের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি বেড়েছে। নির্বাচনী খরচেও স্বচ্ছতার অভাব আছে। তবে শিক্ষিত সংসদ সদস্যদের সংখ্যা বেড়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হয়, নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও জনসংখ্যার তুলনায় তা কম। সংসদে কার্যকর নজরদারিও কম। ফলে সংসদে গঠনমূলক, বিষয়ভিত্তিক বিতর্ক ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির প্রতিফলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তুলতে অসমর্থ হওয়ায় ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কল্যাণ বিবেচনায় বাংলাদেশে একটি উদার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলায় একটি বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি বেড়েছে। সংসদ বর্জনের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি। নবম সংসদে বর্জনের হার ৮৫ ভাগ। পঞ্চম থেকে সপ্তম সংসদে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের হার ১৭ ভাগ। অষ্টম ও নবম সংসদে এ হার আরও কমেছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণের হার সন্তোষজনক নয়। গড়ে ৬-৭ জনের বেশি এমপি উপস্থিত থাকেন না। গণমাধ্যম সম্পর্কে বলা হয়, অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও পেশাগত ঝামেলা ও বাধা-বিপত্তি এখনো উদ্বেগের বিষয়। বেসরকারি চ্যানেল ৪১টি। তবে সংখ্যা বাড়লেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নসাপেক্ষ। আইনের শাসন সম্পর্কে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অসম বলপ্রয়োগ উদ্বেগজনক। শিক্ষা খাত সম্পর্কে বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের শিক্ষার গুণগত মান কমেছে। ২০০৩ সালে যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মাত্র ২০ জন, সেখানে ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ২৩৭৬ গুণ বেড়ে ৪৭ হাজার ৫৩০ হয়েছে। অথচ এই সময়ে পাসের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র তিনগুণ। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে জিপিএ-৫ পাওয়া ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পাস নাম্বার পায়নি। গত তিন বছরে ৫১ শতাংশ, ৫২ শতাংশ ও ৫৫ শতাংশ হারে শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে টিউশন ফি ব্যয়বহুল এবং প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষার মান বড় সমস্যা।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর গবেষণার কিছু দুর্বল দিক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সুলতান হাফিজ রহমান বলেন, গবেষণার কার্যক্রম আগামীতে আরও শক্তিশালী করা হবে। গবেষণার ভিত্তি হিসেবে মুখ্য ও গৌণ উভয় তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করা যায়। আর জরিপ করলেই তথ্যের ভিত্তি শক্ত হবে, গবেষণায় এমন কোনো কথা নেই।