বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আগামী শুক্রবার ১৫ই জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে গত রোববার। সোমবার থেকে টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরের বিশাল ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি কাজ করা হয়েছে। চলছে ময়দান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। প্রথম পর্বের লাখ লাখ মুসল্লির ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট, কাগজ, পলিথিন, বিছানার হোগলা ইত্যাদি এক জায়গায় জড়ো করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে। ঝাড়পোঁছ করা হচ্ছে ১৬০ একর ময়দানে তৈরি সুবিশাল সামিয়ানার নিচের ময়দানকেও। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে তৈরি করা শ’ শ’ পাকা পায়খানা, ওজু-গোসল ও রান্না-বান্নার স্থান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেয়া মুসল্লিদের সুবিধার জন্য। এ ছাড়া ছিঁড়ে যাওয়া, খসে পড়া চট ঠিক করে বাঁধাসহ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পুরো ময়দানকে এ পর্বের জন্যও জেলাওয়ারি ২৭ খিত্তায় ভাগ করে সাজানো হচ্ছে। এসব কাজ ময়দান সাফাই জামাতবন্দি মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে করছেন।
গতকাল ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো ঘরে ফেরার অপেক্ষায় মাঠেই অবস্থান করছেন শ’ শ’ মুসল্লি। জামাতবন্দি এসব মুসল্লি নিজ নিজ মাল-সামানা গোছগাছ করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। আবার অনেকেই আছেন কেনাকাটায় ব্যস্ত। দু-একদিনের মধ্যে তারাও মাঠ ছেড়ে দিবেন। ফেরার পথে যানবাহন না পেয়ে আবার কেউ কেউ প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গাড়ি না পেয়ে ময়দানে অপেক্ষা করছেন। দূর-দূরান্তের এসব মুসল্লির মধ্যে অনেকেই আবার বাস, ট্রাক রিজার্ভ করে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা দিচ্ছেন। ইজতেমা ময়দানের দায়িত্বে নিয়োজিত একাধিক মুরব্বি জানান, ইজতেমার প্রথম পর্বে কোনো কোনো এলাকার কোনো কোনো জামাতবন্দি মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন তা নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া আছে। যারা প্রথম পর্বে অংশ নিয়েছেন তারা আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা ময়দানে থাকতে পারবেন না। তবে আজকের মধ্যে অনেকেই ময়দান ছেড়ে দিবেন। আর যারা থাকছেন তারা পালাক্রমে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠানের জন্য ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন এবং সাজাচ্ছেন। গতকাল ইজতেমা ময়দানের চারপাশ ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত অস্থায়ী মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলোতে বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনার ধূম লেগে আছে। প্রথম পর্ব শেষে ঘরে ফেরা মুসল্লিরাসহ আশপাশ এলাকার লোকজন জিনিসপত্র সস্তায় কেনার উদ্দেশ্যে এসব মার্কেটে ভিড় করছেন। গত রোববার বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে ফেরার সময় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানজটে একাকার। গতকাল পর্যন্ত জনযট কিছুটা কমলেও যানজট লেগেই আছে গত দুই দিন পর্যন্ত। ফলে সকালে দেখা গেছে, হাজার হাজার মুসল্লিসহ অফিসগামী মানুষ মহাসড়কের বাস স্টপেজগুলোতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেসব বাস নিয়মিত যাত্রী বহন করে তার সংখ্যা কম। আর যেগুলো চলছে সেগুলোতে পচণ্ড ভিড়। ফলে যারা টঙ্গী, উত্তরা ও আশপাশ এলাকা থেকে ঢাকায় গিয়ে নিয়মিত অফিস ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন তারা সঠিক সময়ে যেতে না পেরে পেরেসানিতে ভুগছেন। এ সুযোগে বাস, টেম্পো, সিএনজি, বেবিটেক্সি, রিকশা ইত্যাদির চালক-কন্ডাক্টররা নিয়মনীতি না মেনে যাত্রীদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায় করছেন। আরও দেখা গেছে, আখেরি মোনাজাতের পর থেকে টঙ্গী ট্রাক স্ট্যান্ডগুলো থেকে চালকরা ট্রাক বের করে ইজতেমা মুসল্লিদের বহন করছেন। তারাও বাসের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। আর যাত্রীরা বিনা বাক্যে তা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ায় এবং মহাসড়ক থেকে ট্রাফিক চলে যাওয়ায় বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থাটি আখেরি মোনাজাতের পর প্রতি বছরই ঘটে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের পরও আবার একই অবস্থা ঘটে কিনা তা নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছেন অফিসগামী ও নিয়মিত বাস যাত্রীরা।