ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসে ভারতে জঙ্গি হানা হতে পারে আশঙ্কায় কলকাতা, দিল্লিসহ ২৩টি শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের চার আত্মঘাতী জঙ্গি ভারতে প্রবেশ করেছে- এই বার্তা পাওয়ার পর ইন্টেলিজেন্স
ব্যুরোর গোয়েন্দারা সব রাজ্যকে সতর্ক করে বার্তা পাঠিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশি জঙ্গিদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জোর তল্লাশি চালানো হয়েছে। গত রোববার রাতে সীমান্তবর্তী বসিরহাট মহকুমায় জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকতে পারে আশঙ্কায় বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এ তল্লাশি অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার সাধারণতন্ত্র দিবসে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সীমান্তে বিএসএফকে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দুই ২৪ পরগণা জুড়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশিদের আসা যাওয়ার ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক আধিকারিক। তিনি জানিয়েছেন, গত ২০শে জানুয়ারি সতর্কবার্তা আসার পর থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আটোসাঁটো করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ শহরে আসা ও যাওয়ার সব পয়েন্টে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে। গোটা শহরে পুলিশ পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে। সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩টি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। দশ হাজার পুলিশ নিয়ে ১৩টি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দিল্লিকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আইবি, র-ও প্রধানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ফাঁকফোকর রয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজপথের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স ওঁলাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর তাই ওঁলাদ, প্রণব মুখোপাধ্যায় ও মোদির জন্য সাত পর্যায়ের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। দিল্লিজুড়ে ১৫ হাজার সিসিটিভির নজরে রাখা হচ্ছে নিরাপত্তাকে। এছাড়াও ৪৯ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যকে নিরাপত্তায় যুক্ত করা হয়েছে। আকাশপথেও নিরাপত্তা দেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এদিকে সোমবারই পাক জঙ্গিদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ওপর পুলিশের নজরদারি
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে বাংলাদেশি অভিবাসীদের ওপর নজরদারি শুরু হয়েছে। সেখানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তারই প্রেক্ষিতে আবেদনকারীরা ভুবনেশ্বরে প্রবেশ করেছে, যা কড়াভাবে যাচাই করছে স্থানীয় পুলিশ কমিশনারেট। এ অভিযানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে স্পেশাল স্কোয়াড জয়পুরহাট থেকে দু’ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ছয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করা সাত বাংলাদেশিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে তারপর থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে এ জেলাগুলো অবৈধ অভিবাসীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এমন কথা বলেছেন ডিসিপি সত্যব্রত ভোই। তবে সাত বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে আটক দুই ভারতীয় তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ওই সাত ব্যক্তি যে বিদেশি নাগরিক তা তাদের জানা ছিল না। তবে তাদের এ দাবিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিছু ব্যক্তি প্রবেশ করে থাকার সম্ভাবনা আছে। তারা এমন সব ‘পকেটে’ আত্মগোপন করে থাকতে পারে। তাই সীমান্ত জেলাগুলোতে বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের পরিচয় নিশ্চিত হতে বলা হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আটক ওই দুই ব্যক্তির একজন মো. বশির। অন্যজন তার সহযোগী। তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাদের দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, তারা ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দুজন ব্রোকার ব্যবহার করেছে। তারপর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছে। তার কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম ব্রোকার বা দালালকে দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। তারাই তাদেরকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ দিয়ে ভারতে প্রবেশের সুবিধা দিয়েছে। তারপর তারা হয়পুর জেলার বিনঝরপুরে থিতু হয়। শুরু করে কম্বল ও তৈরি পোশাকের ব্যবসা। আস্তে আস্তে তারা জয়পুরে দ্বিতীয় ব্রোকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই ব্রোকার তাদেরকে ভুয়া ভোটার কার্ড তৈরিতে সহায়তা করে। জোগার করে দেয় স্কুলের সনদ। এজন্য ওই দালালকে দিতে হয়েছে ২ হাজার রুপি। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় অর্ধডজন দালাল জড়িত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারেট বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছে, যা শিগগিরই বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়া হবে।