আবিদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর, স্বদেশ নিউজ২৪.কম:
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে উপ-নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তার করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ নয় বলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিচারপতি এই রায় দেন আশফাকুল কামাল এবং জাফর আহমেদ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন ড. মোহাম্মদ ইয়াসিন খান ও কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী । ড. মোহাম্মদ ইয়াসিন খান বলেন, হাইকোর্ট কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আর তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এদিকে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষের আইনজীবী বলেন,কাদের সিদ্দিকীর ঋণখেলাপির বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। হাইকোর্ট বলেছেন,নির্বাচন পরবর্তী যে ট্রাইব্যুনাল হয় সেখানে কাদের সিদ্দিকী আবেদন করতে পারতেন। কাদের সিদ্দিকী সংক্ষুব্ধ, তিনি এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কিনা সেটি পরে জানানো হবে। প্রসঙ্গত,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার দায়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এর পর গত বছরের ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপনির্বাচনের দিন ধার্য করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ঋণখেলাপির অভিযোগে ওই বছরই ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিলের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থার নামে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও নাসরিন কাদের সিদ্দিকী পরিচালক। ঋণখেলাপি হওয়ায় তাঁদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এরপর গত ১৬ অক্টোবর এই দুই নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন। ১৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে রায় দেন। এ খারিজাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী। পরে ২৬ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান ইসির অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মো. ইয়াসিন খান। পরদিন ২৭ অক্টোবর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনই স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে ইসি’র আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে ০২ নভেম্বর এর শুনানির দিন ধার্য করে দেন। এরপর ২ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতির দেওয়া উপনির্বাচনের ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উপনির্বাচন স্থগিত রেখে এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। গত কয়েক কার্যদিবস এ বিষয়ে শুনানি শেষে আজ এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালেও টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর) আসনের উপ-নির্বাচনেও প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। সে সময়ও ঋণখেলাপের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।