দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান সুযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিকাশও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল বিকালে রাজধানীর বেইলী রোডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের নারী-পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশও অত্যন্ত জরুরি। দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিকাশে নাট্যচর্চার ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর যখন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা ছিল, তখন নাটকের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নাটক নীল দর্পণের ঐতিহাসিক ভূমিকাসহ ভোট ও ভাতের আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সকল গণআন্দোলনে নাট্য আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার বিষয়টি অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে দেশে একটি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ডিজিটাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
দেশের নারী সমাজের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের প্রান্তিক, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র নারীদের উন্নয়নে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ স্ববেতনে ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। মহিলা উদ্যোক্তারা পুরুষ উদ্যোক্তাদের থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন। দেশে ৫ হাজার ১৭৮টি ডিজিটাল সেন্টার করে দেয়া হয়েছে। যেখানে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন নারী উদ্যোক্তা রাখারও বিধান করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে শতকরা ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নেয়ার বিধান করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নারীর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আজ তারাই আমাদের মাতৃভূমিকে বিশ্ব ফোরামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকার করছেন। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। তিনি বলেন, নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোÑ এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার। বক্তব্যে নারী-পুরুষ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্মাণ কাজটি নিয়ে আমি অপেক্ষায় ছিলাম, কবে তা শেষ হয়। আজ আমাকে উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা সমিতির সভাপতি সিতারা আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে মহিলা সমিতির পক্ষে ক্রেস্ট উপহার দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তানিয়া বখত। এ এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।