সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে সঙ্গ দিতে তামিম ইকবাল চলে গিয়েছিলেন ব্যাংকক। তাই এশিয়া কাপেই খেলার কথা ছিল না তার। কিন্তু তার পুত্রসন্তান পৃথিবীর আলোতে আসার একদিনের মধ্যেই তিনি মাঠে ফিরেন। অন্যদিকে তরুণ ও সেরা পেসার মুস্তাফিজ ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েন এশিয়া কাপ থেকে। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পান তামিম। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে যাওয়ার ম্যাচে মাঠে নামেন। খুব একটা রান করতে না পারলেও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় নিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের ছুটি কাটিয়ে গতকালই অনুশীলনে ফেরে বাংলাদেশ দল। সেখানে অনুশীলনের ফাঁকে কথা বলেন তামিম ইকবাল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারত। তাই অন্যরকম অনেক হিসাব-নিকাশও এসে যোগ হয়েছে এই ম্যাচের আগে। তবে এতে আলাদা কিছু দেখছেন না দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিম বলেন, ‘সেই ধরনের কিছুই না। ভারত শক্তিশালী একটি দল। তাদের সঙ্গে যারাই প্রতিপক্ষ থাকে, তাদের ভিন্ন ধরনের অনুভূতি থাকাটাই স্বাভাবিক। ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ওরা এশিয়া কাপে ভালো ক্রিকেট খেলছে। সেই সঙ্গে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। শেষ তিনটি ম্যাচে আমরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ফাইনালে যে কোনো কিছুই হতে পারে। যে দল ভালো ক্রিকেট খেলবে তারাই জিতবে। এটাই আর কি।’
টানা তিন আসরে এশিয়া কাপের আয়োজক বাংলাদেশ। আগের দুটি ছিল ওয়ানডে ফরমেটে। এবার অবশ্য প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ফরমেটে হতে যাচ্ছে এই আসর। কিন্তু তিন আসরে দুটিতেই বাংালাদেশ ফাইনালে উঠেছে। ২০১২ সালে ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানে হারের আক্ষেপ দলকে পুড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ৪ বছর ধরে। এবার সেই পাকিস্তানকে হারিয়ে দল ফাইনাল খেলছে দ্বিতীয়বার। প্রতিপক্ষ ভারতকে হারিয়ে জয় আসবে তো এবার? তামিম বলেন, ‘একটি জিনিস নিশ্চিত, ভারতের সঙ্গে জিততে হলে তিন বিভাগেই সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে আমাদের। এই তিন বিভাগে আমাদের অনেক শক্তিশালী থাকতে হবে। কারণ প্রথম ম্যাচে ওরা খুব বাজে অবস্থা থেকে ফিরে এসে ম্যাচ জিতেছে। ওদের সেই স্কিল রয়েছে। ওই ভুলগুলো আমরা কম করলে সবকিছুই সম্ভব।’ তবে এই বিষয়ে ভারতের বিপক্ষে সদ্য ওয়ানডে সিরিজ জয় দলের জন্য আত্মবিশ্বাসের কারণ হতে পারে। অতীতে এশিয়া কাপে তামিমের ব্যাটিং নৈপুণ্যেই ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এ স্মৃতি আত্মবিশ্বাস বাড়াবে কি না- এমন প্রশ্নে তামিম বলেন, ‘আগে মোটামুটি কিছু ভালো খেলেছি। কিন্তু এগুলো অতীত। রোববার যখন আমি শুরু করবো তখন নতুন একটি দিন। আমাদের শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার যে পরিকল্পনা রয়েছে। আমি চেষ্টা করবো ওটা পূরণ করার। যাতে করে দল উপকৃত হয়।’
সদ্য পিএসএল-এ দারুণ ফর্মে ছিলেন তামিম। তাই দেশের মাটিতেও নিজেকে সেই ফর্মে মেলে ধরবেন সেটা সবারই প্রত্যাশা। এই বিষয়ে তামিম বলেন, ‘ফর্ম ভালো থাকলে আত্মবিশ্বাস থাকে। মানসিকভাবেও ভালো অবস্থায় থাকা যায়। আমি চেষ্টা করবো যে, ভালো ফর্মে আমি আছি। সেটা জাতীয় দলের জন্য করতে পারলে ভালো হবে।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ রান করে আউট হয়েছিলেন তামিম। সেটির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। তিনি বলেন, ‘শেষ ম্যাচে একটু বেশি নার্ভাস ছিলাম। ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ১০-১২ দিনের গ্যাপ থাকে। ওখান থেকে এসে খেলাটা একটু কঠিন। একটি জিনিস ভালো হয়েছে ফাইনালের আগে ২-৩টি অনুশীলন সেশন আমরা পাচ্ছি। এটা আমার ব্যক্তিগতভাবেও ভালো হয়েছে। আমি টি-টোয়েন্টি ফরমেটে সম্প্রতি যেভাবে সফল হয়েছি, চেষ্টা করবো ওভাবেই এগুতে। যদি সবকিছু ঠিক তাকে তবে ওটা আমার দিন হবে। আমি চেষ্টা করবো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলার। বিশেষ করে পিএসএল-এ ভালো খেলেছি। সেটি অবশ্যই অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। আপনি যে লিগেই খেলেন না কেন। আপনি যদি রান করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। আত্মবিশ্বাস অবশ্যই আছে। তবে আজকের দিনের পরের দিন নতুন দিন। আমাদের নতুন একটি বল মোকাবিলা করতে হবে।’
সেই সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে তামিম বলেন, ‘ভারতীয় বোলার আমি বিশেষ কোনো একজনের নাম বলবো না। তারা প্রত্যেকেই ভালো বোলার। ভারতের সবাই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। আমরা আমাদের নিয়েই ভাবছি। একটি খারাপ বল পেলে তার সদ্ব্যবহার আর ভালো বল হলে তাকে সমীহ করা। ভারতের সঙ্গে ভালো কিছু ইনিংস খেলার স্মৃতি তো অবশ্যই মনে পড়বে। একটা জিনিস আমরা বিশ্বাস করি, একটা দল যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, আমরা যদি আমাদের মতো খেলি, তাহলে আমরা যে কোনো দলকেই হারাতে পারি। যা আমরা প্রমাণ করেছি। ভারতের সর্বশেষ সিরিজে তাদেরকে আমরা হারিয়েছি। যদিও সেটা অন্য ফরমেট ছিল। তারপরও আমরা যদি ভুল কম করি, তাহলে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে।’