শুনলে যে কারো অবিশ্বাস্য মনে হবে। কিন্তু মায়ের নিজের স্বীকারোক্তি। নিজ হাতেই খুন করেছেন দুই সন্তানকে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তিনি। এ কারণে হঠাৎ করেই তিনি নিজের সন্তানদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। মেয়ের কাছে থাকা নিজের ওড়না দিয়েই গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন নাড়ি ছেঁড়া ধনটিকে। মেয়েকে হত্যার পর ঘুমন্ত ছোট্ট ছেলেকেও হত্যা করেন একই কায়দায়। মায়ের এই স্বীকারোক্তি প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারাও। বিস্মিত হন সবাই। এ কি করে সম্ভব! নেপথ্য কারণ অন্য কিছু থাকতে পারে বলে ধারণা ছিল সবার। একারণে রাতভর চলে জোর প্রচেষ্টা। নানা কায়দায়, নানা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। কিন্তু মায়ের একই স্বীকারোক্তি। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, এটাই একমাত্র কারণ। পরে অবশ্য আফসোস করেছেন। বলেছেন, দুশ্চিন্তা উপশমের জন্য যদি মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন তবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। আর যেই মায়ের বিরুদ্ধে শিশু সন্তানদের হত্যার অভিযোগ, তার নাম মাহফুজা মালেক জেসমিন। তিনি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও ছিলেন সাধারণ গৃহিণী। র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শিশু দুটির মা মাহফুজা মালেক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে তিনি ২৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নুসরাত আমান অরণী (১৪) এবং আলভী আমানকে (৬) ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে দুই শিশুকে হত্যা করেছেন। এসময় তার সঙ্গে আরো একজন ছিলেন। সাথে থাকা ঐ ব্যাক্তিই শিশু দুটির হাত-পা চেপে ধরেন। এছাড়া মাহফুজার (শিশুদের মা) মানসিক অস্থিরতা, অবৈধ সম্পর্ক ও সম্পত্তির লোভ ছিল। জেসমিন একা দুই শিশুকে হত্যার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন মামলার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, জেসমিনের একার পক্ষে দুই শিশুকে হত্যা করা কঠিন। ময়নাতদন্তে নাকে-মুখে ও গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যে ধরনের আলামত পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, একজনের পক্ষে এ হত্যাকা- ঘটানো দুষ্কর। বিশেষ করে ১২ বছরের একটি মেয়েকে চেতনানাশক না খাইয়ে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় না থাকলে একজনের পক্ষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা কঠিন।