পাকিস্তানের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হার। সেই সঙ্গে দলের টালমাটাল অবস্থা। তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি ছিটকে পড়ার পর বড় ধাক্কা তামিম ইককাল না থাকা। সব মিলিয়ে বাকি দুটি ম্যাচ ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততেই হবে টাইগারদের। নয়তো গাণিতিক ভাবেও সেমিফইনাল খেলার আশা বেঁচে থাকবে না। কিন্তু ভীষণ কঠিন এই লড়াইয়ে জিততে চান সাকিব। তাই সব কিছু উড়িয়ে দিয়ে শেষ দুই ম্যাচে শুধু ভালো করার অপেক্ষা। গতকাল ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ভারতের সংবাদ মাধ্যমের যেন আগ্রহের কোনো কমতি নেই বাংলাদেশ নিয়ে। সাকিব আল হাসানকে পেয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুধু জেনে নেয়ার চেষ্টা কি করবে মাশরাফি বাহিনী! ২০০৭ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর এই পর্যন্ত এই আসরে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জয় পায়নি। তাই শেষ দুই ম্যাচে সেই ইতিহাস পরিবর্তনের সুযোগই বা কতটা? সাকিব বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা কখনোই ভালো পারফরম্যান্স করিনি। এই ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই কথা হয়ে আসছে। অবশ্যই এটা আমাদের সুযোগ কিছু প্রমাণ করার। দুটি ম্যাচ আমরা জয় করতে পারিনি। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে পরের দুটি ম্যাচে এমন কিছু করি যেটা মনে রাখার মতো হয়।’
কিন্তু আজ ভারতের বিপক্ষেই সেই অসাধ্য সাধনের শুরু করতে হবে তাদের চেনাজানা মাটিতেই। দলের অবস্থাটা কি এই মুহূর্তে! তবে দলের অন্যকে কি অবস্থাতে আছে সেটি নিয়ে সাকিবের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সবার মনে কি চলছে সেটা বোঝা কঠিন। এ বিষয়ে কমেন্ট করা কঠিন। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’ ভারত বড় দল, এমন দলের বিপক্ষে খেলার আগে তাসকিনকে হারানোতে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি দলটিও দুর্বল হয়ে গেছে! এক তাসকিনের কারণে দল কোনো দুর্বল হয়ে গেছে এটি মানতে নারাজ সাকিব। তিনি বলেন, ‘সে (তাসকিন) শেষ ছয় মাস কিংবা তার বেশি সময় ধরে আমাদের হয়ে ভালো বল করছিল। সে দলের মূল খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। তবে যেটা হয়েছে সেটার মানে এই না যে সব শেষ হয়ে গেছে। সে হয়ত সামনের কয়েক ম্যাচই খেলতে পারছে না। আমি এখনও বিশ্বাস করি আমরা যে দল আছি সে দল আগামীকালের (আজ) ম্যাচে ভালো করতে পারবে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটে ও বলে বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। দলের উপর সদ্য বয়ে যাওয়া যে ঘূর্ণিঝড় তা সামলে উঠতে সময় লেগেছে বেশ কিছুটা সময়। এমনকি ফিল্ডিংটাও হয়নি দলের যেগ্যতা অনুসারে। সাকিবও বিশ্বাস করেন ফিল্ডিংটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিল্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। আমরা সব ক্যাচ ধরতে চাই, ফিল্ডিংয়ে রান সেভ করতে চাই। আমরা গতকাল ফিল্ডিং ঠিকমত করতে পারিনি। এটা হতাশাজনক। আমাদের দলে তরুণ ও অসাধারণ ফিল্ডার রয়েছে। আশা করছি গতকাল যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো সামনে আর না করতে। আমাদের দল শেষ কয়েক ম্যাচেই বেশ ভালো ফিল্ডিং করে আসছে। একটা-দুটা ম্যাচ খারাপ হতেই পারে, ভালো ফিল্ডারও একটি ক্যাচ মিস করতে পারে। তারপরও পরাজয়ের জন্য এটাকে অজুহাত বানাতে চাই না।’
অন্যদিকে ভারতের শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মারা ফর্মে নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার টেনের প্রথম ম্যাচও হেরেছে। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে কাঙ্ক্ষাতি জয় এসেছে। তবুও এখনও নড়বড়ে ভারত দল। কিন্তু সাকিব কোনো ভাবেই সুযোগ দিতে চান না প্রতিপক্ষ ভারতকে। তিনি বলেন, ‘তারা (ধাওয়ান, রোহিত) দলের মূল খেলোয়াড়। আপনি যাদের নাম বলছেন তারা সবাই ম্যাচ উইনার। ভারতের হয়ে বিভিন্ন সময়ে ম্যাচ জিতিয়েছে তারা। হয়তোবা তারা এখন রান পাচ্ছে না। কিন্তু আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের ব্যাটিং অর্ডার এখন সর্বসেরা। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিখুঁতভাবে বোলিং করতে হবে।’
বেশ কিছু দিন থেকে ফর্মে নেই সাকিব। কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুতে এসে দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন তিনি। যদিও দলের জয়ে তা বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু একটা সময় ছিল সাকিব খেলতো তিন নাম্বার পজিশনে। কিন্তু সেই জায়গাটি নিয়ে নিয়েছে সাব্বির রহমান। তাই দলের সিনিয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে কি আবারও সাকিবকে দেখা যেতে পারে এই পজিশনে! কারণ সাকিব নিজেই বলেছেন দলের প্রথম ৬টি ওভারই হলো গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব অবশ্য তিন নাম্বারে খেলা তার পছন্দ বলেও জানিয়ে দেন- দলের প্রয়োজনে যেকোন পজিশনে খেলতে রাজি। সাকিব বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা দল আমার কাছে কি চাচ্ছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ বেশি। আমাকে যদি কেউ অপশন দেয়, আমি তিন নাম্বারেই ব্যাটিং করবো। টিমের পরিস্থিতি, টিমের চাহিদা অনুযায়ী যেভাবে করা দরকার আমি সেভাবে ব্যাটিং করছি। যদি টিম ম্যানেজম্যান্ট মনে করে আমার তিনে ব্যাটিং করা দলের জন্য ভালো হবে আমি তার জন্য প্রস্তুত আছি। ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে, আমি বলবো আমি তিনে ব্যাটিং করতে পছন্দ করবো। তবে দলের জন্য যে কোনো পজিশনে খেলতে প্রস্তুত।’