সুপার টেন পর্বে একটি জয় ভুলিয়ে দিতে পারতো সব কষ্ট, বেদনা, অন্যায় অবিচারের গল্প। কিন্তু তা আর হলো না। বরং শেষটা হলো আরও বিষাদময়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তরুণ সেনসেশন বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের রেকর্ড বোলিংয়ে স্বপ্নের মতোই শুরু হয়েছিল ম্যাচটি। মাত্র ১৪৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্নটা অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু হলো না। বরং নিজেদের ৬২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়লো টাইগাররা। গতকাল ৭০ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস। সঙ্গে বরণ করলো ৭৫ রানের বড় হার। এই ম্যাচকে প্রতীকী হিসেবে ধরা যেতে পারে ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের পারফরম্যান্সের। ধর্মশালায় দারুণ শুরু করেছিল তারা বাছাই পর্বে জয় দিয়ে। সুপার টেনে ওঠার পথটা ছিল স্বপ্নের মতোই। কিন্তু এরপর তা শেষ হলো বিষাদ নিয়ে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ইডেন গার্ডেনের ফ্লাডলাইটে বিপর্যয় ঘটে। এর আগে ২০০৯ সালের ২৪শে ডিসেম্বর ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেটি অবশ্য ওয়ানডে ম্যাচ ছিল। ১১ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। এর আগেই অবশ্য ইডেনের চেয়ে বেশি অন্ধকার নেমে এসেছিল বাংলাদেশের ইনিংসে। দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে ৪৫ রানে হারিয়েছিল ৬ উইকেট। এরপর খেলা শুরু হলে স্কোর বোর্ডে ২৫ রানই যোগ করতে সক্ষম হয় টাইগাররা।
১৪৬ রানের টার্গেটে নেমে মাত্র ৩ রান করে রানআউটের শিকার তামিম ইকবাল। এরপর সাব্বির ও মিঠুন কিছুটা হাল ধরলেও পরে দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের পরিচয় দেন তারা। মিচেল ম্যাকলেনাঘানকে স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে মিঠুন বোল্ড আউট। সেই সঙ্গে ভাঙে সাব্বিরের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি। আর এটিই ছিল টাইগারদের ইনিংসে সবচেয়ে বড় জুটি। কারণ, পরের চিত্রটা আরও করুণ। এরপর দুই অঙ্কের রানের জুটিই হয়েছে আর একটি। মিঠুনের দেখানো পথে একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরেছেন উইকেট বিলিয়ে। ছিল না টিকে থাকার তাড়না। বল উড়িয়ে মারার বিলাসিতায় সাব্বির ১২, সাকিব ২, সৌম্য ৬ রানে আউট। এছাড়াও মুশফিক ০, মাহমুদুল্লাহ ৫, মাশরাফি ৩, মুস্তাফিজ ৬ ও আল আমিন শূন্য রানে ফেরেন সাজঘরে। ধ্বংসস্তূপে শুধু ১৬ রান করে অপরাজিত দাঁড়িয়েছিলেন শুভাগত হোম। উইকেট বুঝে ভালো বোলিং করেছেন কিউই স্লো মিডিয়াম পেসার গ্রান্ট এলিয়ট ও লেগ স্পিনার ইশ সোধি। তবে বোলিং ফিগার যেমন বোঝাচ্ছে, মোটেও তেমন ভয়ঙ্কর ছিলেন না দুজন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই উদার হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন নিজেদের প্রাণ। তিন অংক ছুঁতে পারলেন মাত্র দুজন।
এর আগে মুস্তাাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৪৫ রানে বেঁধে ফেলে টাইগাররা। কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্স মাঠে টসে জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। আর অল্পতেই পরিষ্কার হয়, ইডেনের পিচে ব্যাট হাতে রান করাটা সহজ নয়। নিজের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের স্লোয়ার কাটার খেলতেই পারেননি হেনরি নিকোলস। চতুর্থ ওভারের শেষ বলটি প্যাড ও ব্যাটের মধ্য দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়। নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আবার আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। আগের বলে কোনোমতে বেঁচে যাওয়া কেন উইলিয়ামসন ৩২ বলে ৪২ রান করে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজের পরের স্লোয়ার বলে নিজেকে আর ক্রিজে ধরে রাখতে পারেননি।। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ভেঙে যায় মিডল স্টাম্প। এরপর আল আমিন হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ৩৩ বলে ৩৫ রান করা কলিন মুনরো। এখানেই শেষ নয়। মুস্তাফিজ যেন আতঙ্কের নাম হয়ে আসেন ব্ল্যাক ক্যাপসের সামনে। নিজের তৃতীয় ওভারে আবার আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুভাগত হোম চৌধুরীর চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন গ্র্যান্ট এলিয়ট ৭ বলে ৯ রান করে। তবে আল আমিন হোসেন ক্যাচ ছেড়ে জীবন দিয়েছিলেন রস টেইলরকে। কিন্তু ২৪ বলে ২৮ রান করা টেইলর আউট হন আল আমিনের বলেই। ৯ রানে জীবন পাওয়া টেইলর মোহাম্মদ মিঠুনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন।
নিউজিল্যান্ড ইনিংসে ব্যক্তিগত এক অংকের রানে সাজঘরে ফেরেন ৭ ব্যাটসম্যান। বল হাতে চার ওভারের স্পেলে ২২ রানে ৫ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। চলতি বিশ্বকাপে এটি সেরা বোলিং। এতে মুস্তাফিজুর রহমান পেছনে ফেলেন জেমস ফকনারকে। সুপার টেন পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭ রানে পাঁচ উইকেট নেন এ অজি পেসার। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে ইলিয়াস সানি টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট নিয়ে ছিলেন সবার ওপরে। এবার তার রেকর্ডে ভাগ বসালেন মুস্তাফিজ। এছাড়াও আল আমিন হোসেন নিয়েছেন ২টি উইকেট। সুপার টেন পর্বে এর আগে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে হার দেখে টাইগাররা।