দেশীয় শোবিজে সম্পর্ক ভাঙার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে সংসার ভাঙনের খবর কদিন পরপরই এলোমেলো করে দিচ্ছে পুরো শোবিজ অঙ্গনের ইমেজকে। সম্পর্ক গড়া-ভাঙা এখন যেন খুব স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এ অঙ্গনটির জন্য। যেসব তারকাকে অনেকেই আদর্শ হিসেবে মানেন, তাদের কাছ থেকেই মিলছে এমন ঘটনা। ফলে সাধারণ মানুষের চোখে শোবিজের ইমেজ এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। চলচ্চিত্র, টিভি কিংবা সংগীতাঙ্গন- কোনো মাধ্যমই বাদ নেই এ ভাঙনের দৌড়ে। সম্পর্কের অবনতি ঘটলেই আর দেরি করছেন না তারকারা। খুব দ্রুত বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা। যেন খুব সহজ একটি ব্যাপার। ছেলেখেলার মতো করেই সম্পর্কের সূত্রপাত, বিয়ে এবং অতঃপর ডিভোর্সের পথে এগোচ্ছেন শোবিজের তারকারা। আর এ ভাঙন কিংবা ডিভোর্সের নেপথ্যে রয়েছে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, সন্দেহ, মতবিরোধ, মন-মানসিকতার অমিলসহ নানা কারণ। এ ডিভোর্সের তালিকায় সর্বশেষ কদিন আগে যোগ দিয়েছেন সুপার হিরো সুপার হিরোইনখ্যাত তারকা সাগর ও শম্পা দম্পতি। গত বছরের ১৫ই আগস্ট পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে রূপ দেন তারা। পারিবারিকভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্কটায় পাঁচ মাসও এক ছাদের নিচে কাটাতে পারেননি সাগর ও শম্পা। মতের মিল না হওয়ায় বিয়ের চার মাস পর থেকেই আলাদা থাকা শুরু করেন এ দম্পতি। গত জানুয়ারি মাসে সাগরকে বিচ্ছেদের আইনি নোটিশ পাঠান শম্পা। এরপর মধ্যে তাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে স্ত্রীকে ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা সাগর করলেও শম্পা তাতে কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। চূড়ান্ত বিচ্ছেদেই থাকতে চান তিনি। এদিকে সাগর-শম্পার বিচ্ছেদের ঠিক একদিন আগেই একই সংবাদের শিরোনাম হন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোহানা সাবা ও নির্মাতা মুরাদ পারভেজ। ভালোবেসে পরিবারের অমতে একে-অপরকে বিয়ে করেছিলেন তারা। সংসারও করেছেন অনেকটা সময়। এরই মধ্যে ২০১৪ সালে তাদের ঘর আলো করে একটি সন্তানও আসে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সাবা-মুরাদের সুখের সংসার। কে জানত মিডিয়ার এ সুন্দর জুটির বিচ্ছেদের খবর শুনতে হবে সবাইকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই আলাদাভাবে থাকছেন সাবা-মুরাদ। কারণ নিজেদের মতের অমিল। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর ২০০৮ সালে বিয়ে করেন অভিনেতা মনির খান শিমুল ও অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ। ৭ বছর তারা সংসার করেছেন এক ছাদের নিচে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মতানৈক্যের কারণে ভেঙে গেল তাদের সংসারও। ২০১৪ সাল থেকেই তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে তারা আনুষ্ঠানিক ডিভোর্সের কথা স্বীকার করেন। নাদিয়া জানিয়েছেন, মতবিরোধের কারণেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। ফলে বিচ্ছেদে চলে যেতে হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে নাদিয়া অভিনেতা নাইমকে বিয়ে করে আবারও সংসার শুরু করেছেন। এদিকে চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক ও ৮ মাসের সংসার ভেঙে গত বছরের ৬ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ডিভোর্সে যান হৃদয় খান ও মডেল অভিনেত্রী সুমাইয়া জাফর সুজানা। তাদের সম্পর্কের এ ভাঙন নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় সবচেয়ে বেশি হইচই পড়েছে। কারণ, একে অন্যের প্রতি অসীম ভালোবাসা থেকেই বিয়ে করেছিলেন তারা। নিজেদের সেই ভালোবাসার কথা বারবারই মিডিয়ার কাছে ব্যক্ত করেছেন। এমনকি সুজানার জন্য নিজ পরিবারও ছেড়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু মন-মানসিকতার অমিল ও মতবিরোধের কারণে টিকলো না তাদের সংসার। দুজনের ইচ্ছাতেই ডিভোর্সে যান তারা। এ সম্পর্কগুলোর মতো করেই আরও বেশ কিছু তারকা দম্পতি বর্তমানে রয়েছেন ভাঙন কিংবা ডিভোর্সের দ্বারপ্রান্তে, খোঁজ নিয়ে এমনই তথ্য মিলেছে। এসব ডিভোর্সের ক্ষেত্রে সবারই কারণ প্রায় কাছাকাছি। মতানৈক্য, মতবিরোধ, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও মন-মানসিকতার অমিল। কেউ কারও জন্য ছাড় দিতেই যেন প্রস্তুত নন। আর তাই তো প্রেম ও বিয়ে যেমন চটজলদি হচ্ছে, তার চেয়েও দ্রুতগতিতে হচ্ছে ডিভোর্স কিংবা ভাঙন। এ ক্ষেত্রে তারকা দম্পতিদের মানসিকতায় পরিবর্তন, ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শোবিজবোদ্ধা এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, এটা তো আসলে সবার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর ডিভোর্স শুধু শোবিজে নয়, সমাজের সর্বত্রই চলছে। শোবিজে যারা আছেন তাদেরটা সংবাদের মাধ্যমে উঠে আসে আর সাধারণ মানুষেরটা উঠে আসে না। এখানে খুব বেশি বলার কিছু নেই। তবে একটা কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলবো, প্রত্যেকের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা আনতে হবে। এটা একটা সংসার টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মাসুদা রশিদ চৌধুরী বলেন, বেশকিছু কারণে বিচ্ছেদ ঘটে। যেমন- বোঝাপড়া, যৌতুক দেয়া-নেয়া, পরকীয়া, বাচ্চা না হওয়া, স্ত্রী অসুস্থ থাকা, পুরনো প্রেমসহ নানা কারণ। আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের সমাজে এখন সন্তানরা পরিবারে সঠিক শিক্ষাটা বাবা মার কাছ থেকে পায় না। ওই শিক্ষাটা না থাকায় তারা হরহামেশায়ই বিপথগামী হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, নানা অপরাধের মধ্যেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এসবের সঙ্গে ডিভোর্সের বিষয়টিও চলে আসে। পরিশেষে আমি বলতে চাই, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আগে বোঝাপড়ার ব্যাপারটা ঠিক করতে হবে। একে অন্যকে বুঝতে হবে। তাহলে ডিভোর্সের সংখ্যা হ্রাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।