শরণখোলা উপজেলাধীন পূর্ব সুন্দরবনের নাংলী এলাকার বনাঞ্চলের লেগে যাওয়া আগুন গতকাল ভোর ছয়টা থেকে নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বনবিভাগ। আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ১৫ একর জায়গা নিয়ে বনবিভাগ একটি ফায়ার লাইন (মাটিতে ড্রেন বানিয়ে) কাটার কাজ অব্যাহত রেখেছে। বনকর্মী, ফায়ার সার্ভিস, টাইগার টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) ও এলাকাবাসীসহ কয়েক’শ লোক এ কাজে অংশ নিচ্ছে। তবে, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বনবিভাগ দাবি করেছে। এ ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। ডিএফও (পূর্ব) মো. সাইদুর রহমান দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এ বিষয়ে বনবিভাগ রেঞ্জ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনকে প্রধান এবং চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে সরজমিনে ধানসাগর স্টেশন আওতাধীন নাংলী টহল ফাঁড়ি এলাকা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ও স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ ও মোড়েলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ভক্তের নেতৃত্বে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দাউ দাউ করে না জ্বলে তুষের আগুনের ন্যায় নিভু নিভু করে আনুমানিক ১০ একর বনাঞ্চলের জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তবে, হঠাৎ করে কোথাও কোথাও আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলেও তা তাৎক্ষণিকভাবে নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের দেখা গেছে ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে এক কিমি. দূরত্বে ঘটনাস্থলের আগুনে পানি দিচ্ছে। টাইগার টিম, সিপিজি, বনকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী ১৫ একর জায়গা নিয়ে একটি ফায়ার লাইন কাটার কাজ চালানো হচ্ছে।
সদ্য যোগদানকারী নাংলী টহল ফাঁড়ির ওসি নাসির উদ্দিন জানান, আনুমানিক ১০ একর বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন লেগেছে। এজন্য নিরাপদ দূরত্বে ১৫ কিমি. এলাকা জুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। তবে, ঘটনাস্থলে মূল্যবান কোনো গাছ নেই। ছোট ছোট বলই, ছালুয়া, গেওয়া গাছ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ খুব একটা বেশি হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেননি। স্থানীয় টাইগার টিমের প্রধান আবুল হোসেন, সদস্য ইলিয়াস ও রুহুল আমিন এবং সিপিজি সদস্য চাঁন মিয়া ও মহিদুল হাওলাদারসহ অন্যান্যরা জানান, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘটনাস্থলে এসে তারা কাজ শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একটি সূত্র জানায়, শনিবার আগুন লাগলেও বনবিভাগ দুদিন পর রোববার রাতে খবর পায়। তবে, খবর পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাংলী টহল ফাঁড়ির ওই এলাকায় বর্ষা মৌসুমে হাঁটু সমান পানি থাকে। তখন সেখানে প্রচুর পরিমাণে দেশি প্রজাতীর কৈ ও মাগুর পাওয়া যায়। সে কারণে ওই এলাকায় মাছ ধরার জায়গা পরিষ্কার করতে স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বর্ষা মৌসুমের পূর্ব মুহূর্তে সেখানকার গাছপালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে, প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে। এ ঘটনাও তারই একটি অংশ বলে সূত্র জানায়। ওই এলাকায় মাছ ধরতে মৌসুম প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নাংলী অফিস নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানায়, মৌয়ালী, স্থানীয়দের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকারী ও বন মুরগি ধরার ফাঁদ পাতা চক্রের ফেলে যাওয়া বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। প্রসঙ্গত, রোববার রাত ৮টার দিকে নাংলীর বনের গাছপালায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।