সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এটি নিয়ে চলছে ব্যাপক অালোচনা। শুধু বাংলাদেশ বা ভারতেই যে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে তা কিন্তু নয়। ধর্ষণে এগিয়ে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো ‘উন্নত-আধুনিক’ রাষ্ট্রও।
ইথিওপিয়া
ধর্ষণে তালিকায় দশম স্থানে আছে ইথিওপিয়া। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশটির ৬০ শতাংশ নারীই ধর্ষণের শিকার হয়। দেশটিতে ধর্ষণ একটি জাতীয় সমস্যা। অপহরণ করে কিংবা জোর করে বিয়ে করাকে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জোর করে বিয়ে করা প্রচলন একমাত্র ইথিওপিয়াতেই আছে। অপহরণকারীরা নারীদের ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষণ করতে থাতে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা গর্ভবতী হয়। ইাথিওপিয়ার সেনাবাহিনীও ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত।
শ্রীলঙ্কা
ধর্ষণের তালিকায় নবম স্থানে আছে এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তাকর্মীরা নিজেরাই তাদের দেশের নাগরিকদের ধর্ষণ করেন। গৃহযুদ্ধের শেষ হওয়ার চার বছর পরও শ্রীলঙ্কার নারীরা তাদের দেশের নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা ধর্ষিত হয়। জাতিসংঘ শ্রীলঙ্কার পুরুষদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে দেশটির ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষই জীবনে একবার হলেও ধর্ষিত হয়েছেন। গত বছরে যা ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়াও দেশেটি বিভিন্ন সময় গণধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের সংখ্যা ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর এ কারণে শ্রীলঙ্কায় আত্মহত্যার প্রবণতাও অনেক বেশি।
কানাডা
ধর্ষণের দিক থেকে কানাডা অষ্টম স্থানে। দেশটিতে প্রতি তিনজনে একজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তবে মাত্র ছয় শতাংশ অভিযোগই পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। তবে বিট্রিশ কলম্বিয়ার একটি জরিপে বলা হয়, প্রতি ১৭ জন নারীর মধ্যে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয় যাদের ৬২ শতাংশই শারীরিকভাবে আহত হয় এবং নয় শতাংশ আঘাতের ফলে বিকৃত হয়ে যায়।
ফ্রান্স
কানাডার পরেই ফ্রান্সের স্থান। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণকে অপরাধ বলেই ধরা হতো না। কিন্তু নারী অধিকার কর্মীদের আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি ফ্রান্সে একটি নতুন আইন করা হয়। ২০০২ সালের দিকে আইনটি ফ্রান্সের আদালতে অনুমোদিত হয়। তবে ধর্ষণ হওয়ার পরে অনেক নারীই সম্মানের ভয়ে পুলিশের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়ের করে না। ফলে দেশটির পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারে না। ফলে দেশটির স্থান এখন বর্তমানে সাত নম্বরে।
জার্মানি
জার্মানিতে ধর্ষণের কারণে এ পর্যন্ত দুই লাখ চল্লিশ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজারে। যা সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। আর ধর্ষণের তালিকায় দেশটি আছে ছয় নম্বরে।
যুক্তরাজ্য
অনেকেই আছে উন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রশংসায় বিভোর থাকে। ধর্ষণের দিক থেকে দেশটি আছে চার নম্বরে। ২০১৩ সালে যৌন নির্যাতন নিয়ে দেশটিতে একটি জরিপ চালানো হলে সেখানে দেখা যায় গড়ে দেশটিতে ৮৫ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। আর গেলো বছর এ সংখ্যা দাড়িয়েছে চার লাখ। জরিপে বলা হয় প্রতি পাঁচজনে একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয় যাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।
ভারত
ধর্ষণে এগিয়ে আছে ভারত। দেশটিতে দিনে দিনে ধর্ষণের মাত্রা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর একটি জরিপে বলা হয়েছে ২০১২ সালে দেশেটি ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯২৩ জন যা গেল বছরে আরো বেড়েছে। এরমধ্যে ২৪ হাজার ৪৭০ জনই তার পরিবার, প্রতিবেশির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
সুইডেন
বিশ্বের সবচেয়ে ধর্ষণ প্রবল অঞ্চল হলো সুইডেন। প্রতিদিন ধর্ষণ নিয়ে রিপোর্ট ফাইল হয় সুইডিশ পুলিশের কাছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের দিক থেকে সুইডেন আছে তিন নম্বরে।
দক্ষিণ আফ্রিকা
ধর্ষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১২ সালে দেশেটিতে ৬৫ হাজার ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ৪ হাজার নারীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে এক তৃতীয়াংশ নারীই আগের বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বছরের তুলনায় সম্প্রতি বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের একটি জরিপে বলা হয়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি আফ্রিকান নারী ধর্ষণের শিকার হয়। তবে আফ্রিকা এমন একটি জায়গা যেখানে ছোট বাচ্চারাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পায় না।
যুক্তরাষ্ট্র
সবকিছুর মতো ধর্ষণেও শীর্ষস্থানটি যুক্তরাষ্ট্রের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটির ৯৯ শতাংশ পুরুষই ধর্ষক। ধর্ষণের শিকার ৯১ শতাংশ নারী এবং নয় শতাংশ পুরুষ। একটি জরিপে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল কলেজ থেকেই মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয় যা তাদের গোটা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। তবে অনেকেই এ ব্যাপারে মামলা করতে পায়। আর পুলিশের কাছে যে সকল মামলা আসে তার ১৬ শতাংশ মামলাতেই দেখা যায় ধর্ষণ বাইরের চাইতে ঘরেই বেশি হয়।