মন্ত্রীত্ব, দলীয় উচ্চপদ অবশ্যই প্রত্যাশিত। তবে স্বেচ্ছায় মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেয়াও বিরল। মানুষের অধিকারের সংগ্রামকে বেগবান করতে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দলের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু। মানব কল্যানে নিবেদিত রাজনীতির মহৎ দৃষ্টান্ত। এবার কাউন্সিলে আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো, সাধারন সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলেন সৈয়দ আশরাফ। এটিই আওয়ামী রাজনীতির সৌন্দর্য্য।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ যদি উভয় পাকিস্তানে সুশাসন নিশ্চিত করতো তবে হয়তো আওয়ামী লীগের জন্মের প্রয়োজনই হতো না, সেটি ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সৃষ্টির পর বুঝা গেল যে, পুর্ব পাকিস্তানের সাত কোটি মানুষ এই সংগঠনের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল। মেধাবী নেতৃবৃন্দের পরিশ্রমে অতি স্বল্প সময়েই দলটি গণ-মানুষের আকাঙ্খার প্রতীকে পরিণত হয়। সবচেয়ে গতিশীল হয় তৎকালীন তরুন নেতৃত্বের আইকন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ়তায়।
সময়ের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ এক মহীরুহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নেতা-কর্মীরা ধারন করেন প্রথম প্রেমের মতো। জীবনের শেষ মুহুর্তেও যে প্রেমকে ভুলা প্রায় না। দলে প্রচুর নেতা-কর্মী সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। যারা চলে গেছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের নিঃসঙ্গতা ধরা পড়েছে, মুজিব প্রেমের ছিটেফোঁটাও তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। জাতীয় চারনেতা মুজিব প্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরন তৈরী করে গেছেন।
আমি স্বীকার করি, আওয়ামী লীগে মোশতাক গং-রা ছিল। ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা পেতে মরিয়া। বিশ্বাসের ফাঁক গলে এই কীট ঢুকে পড়েছিল। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রেমমুগ্ধ তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের মতো দিকপাল নেতারাও ছিলেন। তাদের যোগ্য উত্তরসুরি মুহম্মদ নাসিম, সৈয়দ আশরাফ, খায়রুজ্জামান লিটন ও সোহেল তাজরাও আছেন। তাঁরা থাকবেন পদ-পদবীর জন্যে নয়, থাকবেন চেতনা ও আদর্শের জন্য। ভয় নেই মুজিব প্রেমীরা।
প্রকৃতি যেমন শূন্যতা সহ্য করেনা, দলীয় পদও শূণ্য থাকে না। কাল যে পদে সৈয়দ আশরাফ ছিলেন, আজ ওবায়দুল কাদের, পরশু অন্য কেউ আসবেন, এটিই প্রক্রিয়া। দেখার বিষয়, ব্যক্তির কাছে পদ না দল প্রাধান্য পাচ্ছে। আওয়ামী লীগে প্রতিযোগিতা থাকলেও বিশ্বাস করে, ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়েও দেশ বড়। প্রথম প্রেমের আদর্শ মেনে ছাড় দেবার মানসিকতাও নেহায়েত কম নয়।।
জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।।