পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে উত্তর কোরিয়া পৌঁছেছেন বিদেশি সংবাদ কর্মীরা। মঙ্গলবার পশ্চিমা ও চীনা সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রায় দু’ডজন সাংবাদিক পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছান। তাদের স্বাগত জানান উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতেই বোঝা যায় যে, কূটনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, এ সপ্তাহে পাঙ্গি-রি’তে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানায় উত্তর কোরিয়া।তবে তারা কোনো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানায় নি। মঙ্গলবার সংবাদকর্মীরা চীন হয়ে উত্তর কোরিয়া পৌঁছান। বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে তারা উত্তর কোরিয়ার বিমান ধরেন। এ সময় এপি, সিএনএন, সিবিএস, রাশিয়া টুডে ও চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখা গেছে। চীনের সিসিটিভি টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, তারা পূর্ব উপকূলের ওয়ানসান শহর থেকে বেইজিংয়ে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রী বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রমের ওপর কড়া নজর রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন বৈঠকও সফল হবে।
উল্লেখ্য, গত মাসে ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। যৌথ বৈঠকে তারা কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার অঙ্গীকার করেন। কার্যত, দুই কোরিয়া এখনো যুদ্ধের মধ্যেই রয়েছে। কেননা ১৯৫৩ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি হয় নি। তখন দু’দেশ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিই বহাল রয়েছে।
তবে সম্প্রতি একতরফাভাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে আপত্তি জানায় উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলেছে, একতরফাভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে উত্তর কোরিয়ার কোনো আগ্রহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই বিষয়ে অব্যাহতভাবে জোরাজুরি করে, তাহলে দেশটি আসন্ন ট্রাম্প-কিম বৈঠক পুনর্বিবেচনা করারও হুমকি দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কোনো আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করলে, তাতে স্বাগত জানাবে উত্তর কোরিয়া।
এ ছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া নিয়েও আপত্তি তুলেছে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি এ মহড়ার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা বাতিল করে। দেশটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই মহড়া চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি আসলেই কোনো সমঝোতা চায়, তাহলে দেশটিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েনকৃত ২৮ হাজার ৫০০ সেনা সরিয়ে নিতে হবে।
তবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠক সফল করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, উত্তর কোরিয়া যেহেতু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক বাতিলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি, তাই যথাসময়ে বৈঠক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টমুন জারেইন। সেখানে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়াকে আসন্ন ট্রাম্প-কিম বৈঠকে রাজি করানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সাহায্য চান ট্রাম্প।