ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৬ সালের এইদিনে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাকে হারানো ২৩ বছর হয়ে গেল। ঢাকাই সিনেমার নায়কদের নিয়ে কথা বলতে গেলেই তার ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠবেই। চলচ্চিত্রের মানুষেরা বলেন, ‘আজও কেউ পূরণ করতে পারেননি সালমান শাহের শূন্যস্থান।’ এখনও চলচ্চিত্রের আলোচনা হলেই উদাহরণ স্বরূপ সামনে আসে নব্বই দশকের সবচেয়ে সুন্দর ও মেধাবী সেই চলচ্চিত্রশিল্পীর। এই সময়ের নায়কদের কাছে তাদের প্রিয় নায়কের নাম জানতে চাওয়া হলে অকপটেই তারা বলেন প্রিয় সালমান শাহের নাম। মূল নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। চলচ্চিত্রে এসে নাম নেন ‘সালমান শাহ’। ১৯৭০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। সালমান শাহ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম সামিরা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের নিজ বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তার মৃতদেহ। কোটি ভক্তের হৃদয়ে সোনালী অক্ষরে লেখা আছে তার নাম। যেদিন সালমান শাহের মৃত্যু হয় সেই দিন সারাদেশে শোক নেমে এসেছিল। শোক সইতে না পেরে অনেক ভক্ত আত্মাহুতির পথও বেছে নিয়েছিলেন। যদিও সালমান শাহর পরিবার শুরু থেকেই বিষয়টিকে হত্যা বলে অভিযোগ করে আসছে। স্ত্রীর পরকীয়ার জন্যই সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর। ঢাকাই চলচ্চিত্রে সালমান শাহর ছিল আকাশছোঁয়া তারকাখ্যাতি। নব্বই দশকে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি অনেকটাই সালমাননির্ভর হয়ে পড়েছিল। চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ মারা যাওয়ার দুই দশক পরও এর রহস্য উদঘাটন হয়নি।
সিআইডি ও বিচারবিভাগীয় তদন্তে অপমৃত্যু উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন সালমান শাহর পরিবার। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচারবিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচারবিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সালমান শাহর মা বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। এরপর আদালত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি পিআইবি’র তদন্তাধীন রয়েছে। সম্প্রতি সালমান হত্যার সাত নম্বর আসামি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রুবী নামে এক নারী ফেসবুক লাইভে এসে নতুন করে এ মামলার বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, তাকে খুন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই নারী। বিষয়টি নিয়ে এখন চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। ঘটনা যাই হোক, সালমান শাহ ভক্তরা প্রিয় নায়কের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চান। প্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি স্মরণ করেছে তাকে। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান, ‘সালমান শাহের মৃত্যুবার্ষিকী ৬ সেপ্টেম্বর। এই মাসে আমাদের আরও ছেড়ে গেছেন আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মতিনসহ আরও কয়েকজন চলচ্চিত্রের মানুষ।’