প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করার পুরস্কার জান্নাত

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সামাজিক প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জীবনকে সুন্দর করে তুলতে তাদের যেমন পরিবার-পরিজন দিয়েছেন, দিয়েছেন প্রতিবেশীও। প্রতিটি মুমিনের ওপর তার পরিবার-পরিজনের যেমন কিছু হক আছে, তেমনি তার প্রতিবেশীরও কিছু হক আছে। প্রতিবেশীর অন্যতম হক হলো, তাকে কষ্ট না দেওয়া, তার ক্ষতি করার চেষ্টা না করা।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬)

 

এর বিপরীতে, প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করার পুরস্কার জান্নাত। অথচ আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মানুষের প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকে না, ফলে তারা একে অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। কেউ কেউ ক্ষতি না করলেও তার প্রতিবেশীকে মন থেকে পছন্দ করে না। এ পরিস্থিতির কারণ হলো, আমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছি। আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে সচেতন না, তাই ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, বুঝে-না বুঝে আমরা প্রতিবেশীর সঙ্গে বিভিন্ন বিবাদে জড়িয়ে পড়ি। যার রেশ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম রয়ে যায়। অথচ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সে মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা যা পছন্দ করো তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। অথবা তোমার প্রতিবেশীর জন্য। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৫)

ইসলাম প্রতিবেশীকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে সাহাবায়ে কেরামের ধারণা হয়েছিল সম্ভবত প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেওয়া হবে। মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর জন্য তাঁর পরিবারে একটি ছাগল জবেহ করা হলো। তিনি এসে বলেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আ.) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হলো যে হয়তো শিগগিরই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৫২)

নবীজির যুগে প্রতিবেশীর ক্ষতি করা তো অনেক দূরের কথা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে তাকে মাঝেমধ্যে উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার দুজন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার কাছে উপহার পাঠাব? তিনি বলেন, যার দরজা তোমার বেশি কাছে, তার কাছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০২০)। তাই আমাদের উচিত, মহানবী (সা.)-এর এই সুন্নতটিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা। ইসলামী আইন মেনে যতটুকু সম্ভব প্রতিবেশীর হক আদায়ে যত্নবান হওয়া। প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে আসা, তাকে সহযোগিতা করা। তবেই মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।

 

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *