মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান। আলোকচিত্র শেখার স্কুল কাউন্টার ফটোর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আগামীকাল এ সম্মাননা দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ অনুষ্ঠান শুরু হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনে কাউন্টার ফটোর আয়োজনে আগামীকাল আজীবন সম্মাননা ছাড়াও থাকছে তিনটি আলোচনা অনুষ্ঠান। ‘ভারতীয় আলোকচিত্রের ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা করবেন দৃক ইন্ডিয়ার পরিচালক শুভেন্দু চ্যাটার্জি। বাংলাদেশের ১৭ জন তরুণ আলোকচিত্রীর ছবি নিয়ে ‘সমকালীন আলোকচিত্রের ধারা ও গতি-প্রকৃতি’ বিষয়ে আলোচনা করবেন কাউন্টার ফটোর অধ্যক্ষ আলোকচিত্রী সাইফুল হক অমি। এরপর ‘সাম্রাজ্যের রাজনীতি ও বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যম’ বিষয়ে আলোচনা করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
গতকাল শুক্রবার সকালে কাউন্টার ফটোর মিরপুর ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন বরেণ্য আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন। সন্ধ্যায় ‘গুজবের গণতন্ত্রে যোগাযোগ-গেরিলা: যোগাযোগ-বার্তার অর্থ নির্ধারণ প্রসঙ্গে একটি উসকানিমূলক আলোচনা’ শিরোনামে বিশেষ বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন।
এ আয়োজনে দুদিনব্যাপী ফটোবুক প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে আলোকচিত্রের ১০০ বই। পাশাপাশি ছিল কাউন্টার ফটোর শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। একই দিনে সদ্যপ্রয়াত আলোকচিত্র-সাংবাদিক আজিজুর রহীম পিউকে শ্রদ্ধা জানাতে ক্যাম্পাসে একটা দেয়ালচিত্র অবমুক্ত করে কাউন্টার ফটো। আজিজুর রহীম পিউয়ের প্রতিকৃতিসহ তাঁর তোলা ছবি দিয়ে আঁকা হয়েছে দেয়ালচিত্রটি।
আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান সম্পর্কে কাউন্টার ফটোর অধ্যক্ষ সাইফুল হক অমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আসলে বর্তমান সময়টাকেই আমরা মূল্যায়ন করতে চেয়েছি। গত বছরের শাহবাগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নটি নতুন করে তরুণ প্রজন্মের সামনে হাজির হয়েছে। আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হানের একাত্তরের অবদানকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে আমরা আসলে মুক্তিযুদ্ধকেই সামনে নিয়ে আসতে চাই। আর যেটা বিবেচ্য তা হলো, তথাকথিত মূলধারার আলোকচিত্রী না হয়েও তাঁর কাজের শক্তি, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাঁর কাজের গুরুত্ব।’ তিনি আরও জানান, গত বছর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং পথিকৃৎ নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানমকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছিল কাউন্টার ফটো।
মুক্তিযোদ্ধা আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরে ফটোসাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে যোগদানের পর মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিরল মুহূর্তের ছবি তোলেন তিনি। আলোকচিত্রী রায়হানের ক্যামেরায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির, ভারতে শরণার্থী ক্যাম্প, প্রবাসী সরকারের কার্যক্রমসহ যুদ্ধকালীন বিপর্যস্ত জনজীবনের ছবি সরকারের প্রচারকাজ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তবে, সত্তরের নির্বাচনের সময় থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ছবি তুলতে শুরু করেছিলেন রায়হান।