জামায়াতের শেষ রক্ষা হচ্ছে না
-
Update Time :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
-
২৮২
Time View
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও তার সব অঙ্গসংগঠনসহ রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিচারকাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার শুরু হওয়ার পরপরই অভিযুক্ত সংগঠনগুলোকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। অবশেষে কাক্সিক্ষত সেই বিচারের কাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ লক্ষ্যে শিগগিরই আইন প্রণয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে জামায়াত ও তার মিত্র সংগঠনগুলোর বিচারে আইন পাস করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে জাতীয় সংসদ। আগামী মাসে (জানুয়ারি) অনুষ্ঠেয় বছরের প্রথম অধিবেশনেই আইনটি পাস হওয়ার কথা রয়েছে। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই আইনটি পাস হবে। এজন্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক দলের বিচারের বিধি সংবলিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ এ কিছুটা সংশোধনীও আনা হচ্ছে। একাত্তরে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষে অনেক আগেই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। এর ভিত্তিতে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার পর জামায়াতের বিচার শুরু হবে। তবে ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিচারের বিধি সংবলিত ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী পাসের অপেক্ষায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করতে পারেননি প্রসিকিউশন। এ আইন চূড়ান্ত হলে তারা এটি তৈরি করে দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটররা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ৭ দফা দাবির মধ্যে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও ছিল। ট্রাইব্যুনালের আইনে প্রসিকিউশনের আপিলের সুযোগ না থাকায় ওই আন্দোলনে আইন সংশোধনের দাবি ওঠে। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের দাবিও তোলা হয়।
এদিকে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণেও একাত্তরে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো উঠে আসে। এ রায়ের পর ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে রায়ের বিরুদ্ধে আসামির পাশাপাশি সরকারেরও আপিলের সমান সুযোগ এবং ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের বিল পাস হয়।
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের বিচারের পরবর্তী রায়গুলোতেও দলটির যুদ্ধাপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে ৫ মাসের তদন্তও শেষ করেছে প্রসিকিউশন। কিন্তু এর মধ্যে কোনো দল বা সংগঠন যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত হলে তার শাস্তি কী হবে তা আইনে না থাকার বিষয়টি উঠে এলে সাজা নির্দিষ্ট করতে আবার আইন সংশোধনের কথা ওঠে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংসদের সদ্যসমাপ্ত চতুর্থ অধিবেশনে আইনটি পাস করার কথা ছিল। গত ৩ নভেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তবে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু সফর থাকার কারণে মন্ত্রিসভার কয়েকটি বৈঠক হয়নি। এ কারণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ঝুলে গিয়েছিল। ফলে ওই আইনটি সংশোধন করে গত সংসদ অধিবেশনে পাস করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে আরবিট্রেশন বিষয়ে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, চলতি মাসেই (ডিসেম্বর) অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে আইসিটি আইন পরিবর্তনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উঠবে। নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই আইনটি পাস হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর এ সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলে অভিযুক্ত জামায়াত ও তার সব অঙ্গসংগঠন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী বাহিনীগুলোর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
More News Of This Category