মিরপুরের চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্রী আমেনা আক্তার রেশমা তিন পরিবারের বিরোধে খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা, সৎ মা ও সৎ ভাই বোনদের পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত করছেন। নিহত রেশমার বাবার তিন স্ত্রী এবং মায়ের আগের পক্ষের দুই মেয়ে ও তাদের স্বামী- এবং রবিন নামের এক সৎ ভাইকে এই খুনের ঘটনায় সন্দেহের তালিকায় রেখেছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রেশমার সৎভাই রবিন (২২) ও বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মিলনকে আটক করেছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩দিনের রিমাণ্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিরপুর মডেল থানার মামলার তদন্তাকরী কর্মকর্তা সহকারি পরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল আরেফিন শীর্ষ নিউজকে জানান, নিহত রেশমার বাবা আলমগীর হোসেনের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রবিনসহ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তার বাবার চাকরির সুবাদে পাওয়া মিরপুরের বিসিআইসি স্টাফ কোয়ার্টারের ফ্লাটে ছোট ভাই রাকিব (২০) ও মাকে নিয়ে থাকেন। আর রেশমার বাবা আলমগীর দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম ও রেশমাকে নিয়ে মিরপুর ২ নম্বরের রাইনখোলা এলাকার একটি পাঁচ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন।
রেশমার মা মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, রবিন প্রায়ই তাদের বাসায় এসে হুমকি-ধমকি দিত। আর মরিয়ম আলমগীরের আগে হামিদ নামে অপর একজনকে বিয়ে করে ছিলেন। ওই সংসারে তার দুই মেয়ের রয়েছে। তাদের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে।
এছাড়া, আলমগীরের তৃতীয় স্ত্রী খোদেজা বেগম ঝালকাঠি থাকেন। সেই ঘরেও ছোট দুই সন্তান রয়েছে। খোদেজাও মাঝেমধ্যে মরিয়ম ও তার মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে জানা গেছে।
মিরপুরের বিসিআইসি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার রেশমাকে (২০) বৃহস্পতিবার সকালে ঘুমে রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর ২ নম্বরে একটি কাজে যান তার মা মরিয়ম। দুপুরে ফিরে ঘরে ঢুকে মেয়ের গলাকাটা লাশ দেখতে পান তিনি। মরিয়ম যখন বাসা থেকে বের হন তখন রেশমার বাবা আলমগীর ঘরে ছিলেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে স্ত্রী বেরোনোর পরপরই রেশমাকে ঘুমে রেখে অফিসের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন বলে আলমগীর জানিয়েছেন।
মেয়ে হত্যার জন্য রাতেই মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন মরিয়ম। আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ না করলেও এজাহারে তিনি রবিন ও খোদেজাকে ঘিরে তার সন্দেহের কথা লিখেছেন।
মরিয়ম বেগম বলেন, আলমগীরের প্রথম ঘরের ছেলে রবিন মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় এসে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিত। আর তার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার প্রায় দশ বছর পর ঝালকাঠির এক মেয়েকে বিয়ে করেন আলমগীর। মাঝে মাঝে ওর (আলমগীর) খোঁজ পাওয়া যেত না। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে ঝালকাঠি থেকে তাকে আনা হত। আলমগীরের তৃতীয় স্ত্রী খোদেজা বেগম তখন আমাকে ও আমার মেয়ে রেশমাকে হত্যা করার হুমকি দিত।
সুত্র জানায়, রেশমা যে ফ্ল্যাটে খুন হন, ওই ফ্ল্যাটটি মরিয়মের এবং ফ্ল্যাটটি রেশমাকে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। ফ্ল্যাটের কারণেই রেশমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে রেশমার মা এখন অভিযোগ করছেন। পাশের বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় রেশমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে শুনেছেন। এক পর্যায়ে রেশমা ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের বারান্দায় গেলে এক নারী লাল ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে যান। ওই বাসা থেকে প্রায় সাত ভরি সোনার গহনা ও বেশ কিছু টাকা খোয়া গেছে বলে মরিয়াম জানিয়েছেন।
ঘটনার পর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ডাকাতির ঘটনা নয়। রেশমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এসে খুনিরা এসব মালামাল নিয়ে গেছে। ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দারা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে আলমগীর পরিবার নিয়ে দ্বিতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। আর ফ্ল্যাটটি নেওয়ার পর থেকে আলমগীরের অন্য দুই স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা মরিয়ম ও তার মেয়েকে হিংসা করতে শুরু করেন। তাদের ধারণা ফ্ল্যাটটি আলমগীর কিনে দিয়েছেন।
আলমগীর জানান, মরিয়মের ভাই-বোন কেউ নেই। নোয়াখালীতে তার গ্রামের বাড়িতে কিছু জমি ছিল, সেটা বিক্রি করে এই ফ্ল্যাটের জন্য টাকা দেওয়া হয়। তবে প্রায় ২৩ লাখ টাকায় ঠিক করা এই ফ্ল্যাটের অর্ধেক টাকা এখনও বাকি রয়েছে। মরিয়ম জানান, ফ্ল্যাটটি আমার নামে এখনও রেজিস্ট্রি করা হয়নি। কিন্তু আমার মেয়েকে এই ফ্ল্যাটের কারণেই হারালাম। মরিয়মের প্রথম স্বামীর ঘরে দুই মেয়ের স্বামীরাও এই হত্যাকা-ে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল আরেফিন শীর্ষ নিউজকে জানান, মামলা হওয়ার পর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করছেন।