রাত পোহালেই এ বছরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষাকে সামনে রেখে তৎপর হয়ে ওঠেছে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা। তারা ইতিমধ্যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। পরীক্ষা শুরুর ৩ ঘন্টা আগে ২ লাখ টাকায় মিলবে শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন।
এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে হলের বিভিন্ন কক্ষে ঘুড়ে ঘুড়ে আত্মীয়-স্বজন অথবা পরিচিত কারো জন্য প্রশ্ন লাগবে কিনা খোঁজ নিচ্ছেন। প্রশ্নের জন্য তারা ২ লাখ টাকা চাচ্ছেন এবং পরীক্ষা শুরুর ৩ ঘন্টা আগে প্রশ্ন দিবেন।’
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘প্রশ্ন দিতে তারা অনেক টাকা চাচ্ছে। এত টাকা দেয়া সম্ভব না। তাই আমি প্রশ্ন নেইনি। একটু কমে হলে নিতে পারতাম।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ সেশনের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার । বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাকি আরও চারটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বলে জানা যায়।
অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা অবনমনের প্রতিবাদে এবং স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবিতে গত বুধবার ২০১৫-১৬ সেশনের ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার পূর্ব নির্ধারিত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল ও পুনঃপরীক্ষার দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করে আসছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করলে আন্দোলন আরো গতি পায়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সংহতি প্রকাশ করেন।
এছাড়া ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে তিন দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। দাবিগুলো হলো প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ, ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে নেওয়া ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিচার। এ দাবি মানতে তারা সরকারকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিল।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল ও পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।সকাল ১১টার দিকে শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করে এসব শিক্ষার্থী। এরপর বিভিন্ন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়।সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। টানা ২০ দিন ধরে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।