প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের রাজনীতি ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে। এটি দেশের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ থেকে মুক্ত হতে হবে। গতকাল বিকালে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সারাজীবন সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। কোনদিন অন্যায় করিনি, অন্যায়কে প্রশ্রয়ও দেইনি। এটিই আমার সাহস, মনের জোর ও শক্তি। তাই কেবল দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও আমি বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারি। নিজেকে ১৬ কোটি মানুষের প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করেছি। কিন্তু বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলতে পারি না। অন্য দলের বিপক্ষেও কথা বলতে পারি না। এমনকি আমার ছেলে যখন আমার আসনে নির্বাচন করেছে, আমি তার পক্ষেও কথা বলতে পারিনি। আমি আমার ছেলেকে বলি, নিজের আখের গোছানোর চিন্তা না করে দেশ ও মানুষের জন্য যেন সে কাজ করে। অষ্টগ্রামে নিজের নামে নবনির্মিত ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু’ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এই নাগরিক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার জন্ম হাওর এলাকায়। বৃটিশ ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ তিনটি রাষ্ট্রের নাগরিক আমি। হাওর এলাকার মানুষ বরাবরই অবহেলিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছে। তাই একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার উপলব্ধিই ছিল, হাওর এলাকার উন্নয়ন। তিনি বলেন, এক সময় হাওর এলাকায় বর্ষাকালে কেউ মারা গেলে, তাকে কবর দেয়া কিংবা শ্মশানে পোড়ানোর জায়গাও ছিল না। তাদের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এখন হাওরের প্রতিটি গ্রামে একাধিক কবরস্থান ও শ্মশান রয়েছে। এখন আর মানুষকে পানিতে ভাসাতে হয় না। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে সড়ক নির্মাণকাজ পানি শুকালেই শুরু হবে। এতে করে এই তিন উপজেলার মানুষ কেবল শুকনো সময়েই নয় বর্ষাকালেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল ভোগ করতে পারবে। এছাড়া, মিঠামইন ও নিকলীর মাঝামাঝি স্থানে ক্যান্টনমেন্ট করা হচ্ছে।
অষ্টগ্রাম উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চুর সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী ও বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, অষ্টগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে অষ্টগ্রামে অবতরণ করেন। সেখানে গার্ড অব অনার ও বিশ্রাম শেষে বিকাল ৩টায় প্রায় ৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৪১ মিটার দীর্ঘ ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু’ উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণের ফলে অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম সদর, পূর্ব অষ্টগ্রাম, বাংগালপাড়া, দেওঘর ও কাস্তুল এই পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ সারাবছর সড়ক যোগাযোগের সুফল ভোগ করবে। সেতু উদ্বোধনের পর প্রেসিডেন্ট একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে নাগরিক সমাবেশে যোগদান করেন।