হতাশার ছায়া সবখানে। ক্রিকেটপাগল সব বাংলাদেশীর মন খারাপ। হায় একি হাল। বুকে স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল। হারাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। শক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে তারা। তাদের বিপক্ষে জয় সম্ভব হলেও সহজ ছিল না। তবুও আত্মবিশ্বাস ছিলÑজিততে পারে বাংলাদেশ। ২৬৫ রানে নিউজল্যান্ডকে বেঁধে ফেলার পর আত্মবিশ্বাসটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু হায় একি শুরু। দ্বিতীয় বলেই আউট তামিম ইকবাল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান যার তিনিই আউট। তাতেও হতাশার কিছু ছিল না। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন যে অনেক লম্বা। কিন্তু একি! টিম সাউদির বল যে খেলতেই পারছে না কেউ। একে একে ১২ রানে বিদায় টপ অর্ডারের তিনজন। এরপর ভরসার প্রতীক মুশফিকুর রহীমও আউট। ৩০তম জন্মদিনের আনন্দটাই মাটি। দলের রান মাত্র ৩৩। চরম আশাবাদির মনেও হতাশার ছাপ। দুরু দুরু বুকে জুটি বাঁধলেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ আসরে দুজনের নৈপুণ্যই মলিন। তবে সোনালী অতীতে ভরসা রেখে খেলা দেখতে থাকেন দর্শকরা। ইংলিশ ধারাভাষ্যকাররা মোটামুটি নিশ্চিত এ খেলায় বাংলাদেশ হারছেই।
কিন্তু ক্রিকেট যে একটি জুটির খেলা। একটি জুটিই বদলে দিতে পারে সব। এমন ইতিহাস ক্রিকেটের পাতায় পাতায়। এমনই এক ইতিহাস রচনা করলেন সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ। আগে হয়নি বলে আজ হবে না। তা না ভেবে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। দারুণ হিসাবী খেলা। মারের বলে মার, ছাড়ের বলে ছাড়। বাংলাদেশ যখন ১৫তম ওভারে ৫০ রান করে তখন সেটাই অনেক বড় মনে হচ্ছিল। এরপর রানের পর রান সাজিয়ে ইনিংসের আকার বড় হতে থাকে। ক্রমে ১০০ পেরিয়ে ১৫০ হলো। বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে ঊঁকি দিতে থাকে জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু মুখ ফুটে কেউ বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু জুটির দৈর্ঘ্য যখন দুশও পার হলো তখন আর ঠেকায় কে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে সাকিব-তামিম দুজনই চলে যান সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ শিবিরে কিন্তু তখনো ভাব গাম্ভির্যপূর্ণ পরিবেশ। জয়ের এতো কাছে তবুও মুখ ভার করে বসে আছেন সবাই। সদা ভয়. সদা সংশয়। যদি না আবার হাতছাড়া হয়ে যায় খেলা। সাকিব যখন ছক্কায় সেঞ্চুরি করলেন তখনই উল্লাস দেখা গেল সাজ ঘরে। জুটিটা অবিচ্ছিন্নই থাকতো। কিন্তু সাকিব হাঁকাতে বোল্ড হওয়ার আগে ২২৪ রান উঠে গেছে জুটিতে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। প্রথম দ্বিশতক রানের জুটিও। এর আগে তামিম-মুশফিকের ১৭৮ রানের জুটি ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫তে ওই জুটি গড়েন তারা। আর ওয়ানডে ক্রিকটে পঞ্চম উইকেটে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি আছে আর মাত্রই দুটি। একটি ইংল্যান্ডের মরগান-বোপারার ২২৮। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মিলার-ডুমিনির ২৫৬ রান।