স্বদেশ নিউজ২৪.কম: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শ্রেষ্ঠ সম্পদের নাম মা। সেই ‘মা’ নারী সমাজের পথিকৃৎ। সফলতার মলাটে বাঁধানো এক রঙিন ডায়েরি। মাটির ঘর থেকে মহাকাশে ছুটে চলা বিমান আজ তাদের দখলে। সভ্যতার প্রতিটি পাতায় আজ তাদের হাতের চিহ্ন। নারীরাই আজ সফল ও সফলতার পথে। তেমনি অনেক নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক নারীরই এখন ক্যারিয়ার সচেতন। আগের চেয়ে বেড়েছে ব্যবসায় বা চাকরিতে অংশগ্রহণ। এ ছাড়া শখের উদ্যোগও ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে শিল্পময় সাফল্যে। তেমনই একজন সফল রন্ধণশিল্পী দিল আফরোজ সাইদা। সাইদাস কিচেনের শেফ ও সত্ত্বাধিকারী এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসেসর দিল আফরোজ সাইদা। সাইদা নিয়মিত রেসিপি লিখছেন দৈনিক যুগান্তর, ডেইলি অবজারভার, প্রথম আলো, ডেইলি সমকাল, বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও অনলাইন মিডিয়াতে। বিটিভি, এটিএন বাংলাসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেলে রান্নার প্রোগ্রাম করেছেন ।
স্বদেশ নিউজ২৪.কম এর সম্পাদক আরজে সাইমুর রহমানের সাথে একান্ত আলাপনে তার এই রন্ধন জগতের অধ্যায় নিয়ে অনেক কথা জানা গেল। তিনি জানান- “সাইদাস কিচেন” হচ্ছে আমার কিচেন স্টুডিও যেখানে কুকিং ক্লাস, কুকিং শো ও ফুড ফটোগ্রাফি করে থাকি। “গুণীজন সন্মাননা” পেয়েছিলাম রন্ধনশিল্পি হিসাবে বাংলাদেশ কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ফোরাম থেকে। এছাড়াও সেরা রাঁধুনিতে প্রতিযোগিতা থেকে পেয়েছিলাম “আউটস্টেন্ডিং পারফরমেন্স এওয়ার্ড”।
রান্না নিয়ে কাজ করছি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। রান্নাটা আমার নেশা ও পেশা। রান্না শুরু করি যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন থেকেই। আমি যখন কোন রান্নার প্রোগ্রাম করি, তখন আমার ছোট বেলার শখের কাজগুলো (যেমন রান্না করা, ছবি তোলা এবং নিজের ডিজাইন করা ড্রেস পরা) একসাথে পাই। রান্নাটা বেছে নেয়ার এটাই অন্যতম কারন।
সেজন্য আমি শুরুতেই রান্নার কিছু সার্টিফিকেট কোর্স করেছিলাম । ইপিক ইনস্টিটিউট, এল জি, মোলিনেক্স সহ বেশ কিছু জায়গা থেকে ট্রেনিং নিয়েছি ওভেন ও মাইক্রোওয়েভ কুকিংর ওপর। এছাড়াও ভেজিটেবিল কার্ভি ও মিষ্টি তৈরি শিখেছিলাম বিভিন্ন রান্নার স্কুল থেকে। রান্না শেখানো শুরু তখন থেকেই ।
তবে যেকোনো কাজকে পেশা হিসাবে নিতে চাইলে এবং তা অন্যকে শেখাতে হলে,আগে নিজে সেটা সম্পর্কে জানা ও শেখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই, আরও পড়াশুনা শুরু করি সেটা নিয়ে।
ন্যাশনাল স্কিল সার্টিফিকেট কোর্স কুকিং লেভেল ১ ও বেকিং লেভেল ৪ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে । এছাড়াও আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি ইউএসএ থেকে কেক ডেকোরেশন ও ডেজার্ট এর ওপর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রিলেটেড আর্ট এ অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে পরবর্তীতে ফুড হাইজিন ও কালিনারি আর্টে ডিপ্লোমা করেছি ন্যাশনাল হোটেল এন্ড টুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে।
ইন্টার্নশিপ করেছিলাম প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল থেকে, এবং সেখানে আমার আটটি কিচেনেই কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। সাধারণত সবাই শেফ কোর্স করে,ইন্টার্নশিপ করে, এবং অবশেষে চাকরি করেন। তবে আমার স্বাধীনভাবে কাজ করতে ভাল লাগে শুরু থেকেই, কারন এতে আমি বিভিন্ন ধরনের কাজের স্বাদ নিতে পারি; কাজটি কখনো একঘেয়ে মনে হয় না।
কাজের ক্ষেত্রে শুরুতে বাধা এসেছিলো। আমি অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকা অবস্থায় বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছি। বিয়ে, সংসার, রান্নার বিভিন্ন পড়াশুনা, ড্রাইভিং, কম্পিউটার, ইত্যাদি একসাথে শেখাটা মোটেও সহজ ছিল না। তবে আলহামদুলিল্লাহ এখন কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমার স্বপ্নর কাছে সবই ছিল তুচ্ছ।
রান্না নিয়ে যেহেতু কাজ করছি তাই এর সাথে সম্পর্কিত অন্য কাজগুলিও শেখার চেষ্টা করছি- যেমন ফুড প্রেজেন্টেশন, ফুড ফটোগ্রাফি, কুকিং ভিডিও ইত্যাদি। “সাইদাস কিচেন” নামেই আমার একটা পেইজ ও ওয়েবসাইট রয়েছে। ওখানে পাওয়া যাবে আমার সব রেসিপি ও ভিডিও।
তরুণরা যারা এই পেশায় আসতে চায়, আমি তাদের বলবো, চাকরিই যে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করে যদি শেফ কোর্সে ডিপ্লোমা করে এবং কোন ভাল হোটেল থেকে ইন্টার্নশিপ করে চাকরিতে ঢুকে, পরবর্তীতে সে চাকরি না করলেও নিজেই স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারে। এছাড়াও কম্পিউটার ও ইংরেজি শেখা উচিত যেন সবার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়।
সফল রন্ধণশিল্পী দিল আফরোজ সাইদার স্বপ্ন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান-কুকিং স্টুডিওটাকেও আরও বড় করা, যেখান ফুড ফটোগ্রাফি, কুকিং ভিডিও, কুকিং ক্লাস ও কেটারিং একই সাথে একই জায়গায় করা সম্ভব হয়। এখন যে অবস্থায় আছি, আগামি পাঁচ বছর পর যেন সে অবস্থায় না থেকে আরও ভাল অবস্থানে নিজেকে দেখতে চাই।
যা খুব ভাল পারেন সেটাই মন দিয়ে করুন। একটা উদ্দেশ্য ঠিক করুন, সেটার পেছনে প্রতিদিন পর্যাপ্ত সময় দিন। তাতে উপার্জন স্বীকৃতি ও সুনাম আসবেই।