টুইটারপ্রধান ইলন মাস্কের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এখন টুইটারের মালিক। কিন্তু টুইটার কেনাটাই শেষ কথা নয়, মাস্কের সামনে টুইটার নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ।

ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে টুইটারের মালিকানা পেয়েছেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন, টুইটারের দাম এত নয়। বেশি দামে টুইটার কিনে ঠকেছেন মাস্ক।

টুইটার কিনতে গিয়ে পানি কম ঘোলা করেননি মাস্ক। তবে শেষমেশ বেশি দামে টুইটার কিনে অনেকেরই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্বের শীর্ষ এ ধনকুবের।

এ ব্যাপারে চলতি মাসের শুরুতে ইলন মাস্ক বলেন, ‘অবশ্যই আমি বেশি দাম দিয়ে টুইটার কিনেছি। এখন হয়তো টুইটারের দাম কম হতে পারে, তবে সামনের দিনগুলোত টুইটার অনেক সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে বর্তমান মূল্যের থেকেও টুইটার অনেক দামি হবে। এ ক্ষেত্রে এটাকে মোটেও বিচক্ষণহীনতা বলে ভাবছি না আমি।’

এদিকে টুইটারের মালিকানা পেয়েই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কিছু নির্বাহীকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইলন মাস্ক। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পরাগ আগরওয়াল, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

ইলন মাস্ক মূলত এশিয়ান অ্যাপ ‘উইচ্যাট’-এর আদলে টুইটারকে সাজাতে চাচ্ছেন। মাস্ক তার এক টুইটবার্তায় জানান, টুইটার হবে একটি সুপার অ্যাপ, যেখানে সব ধরনের সুবিধা মিলবে। অনেকটা একের ভেতরে অনেক কিছুর আদলে টুইটারকে গড়ে তোলার কথা জানান মাস্ক। এশিয়ান অ্যাপ উইচ্যাটের মাধ্যমে কেবল মেসেজই পাঠানো যায় না; পেমেন্ট, অনলাইন শপিং ও গাড়ি ভাড়া করার মতো নানান সুবিধাও রয়েছে। মূলত যেসব দেশে গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রচলিত অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ, সেখানে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এসব অ্যাপ।

মাস্কের পরিকল্পনা নিয়ে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক স্কট গ্যালওয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো সুপার অ্যাপ নেই। মাস্ক যদি টুইটারকে এভাবে সাজাতে পারেন, তা হবে অনন্য। মূলত নানা ধরনের বাধাবিপত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সুপার অ্যাপের আবির্ভাব ঘটেনি।

স্কট গ্যালওয়ে বলেন, অ্যাপল ও গুগলের মতো অ্যাপগুলো নিজেদের সুপার অ্যাপ বলে দাবি করেন। এদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে টিকে থাকা অন্য অ্যাপগুলোর জন্য বেশ কঠিন। বিশেষ করে এদের স্টোরে এমন অ্যাপের জায়গা দেয়া হয় না যা কিনা এদের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করে। ক’দিন আগেও স্পটিফাই যখন অডিওবই বিক্রির প্রস্তাব দেয়, অ্যাপল তা নাকচ করে দিয়েছিল।

অন্যদিকে টুইটারকে আরও স্বাধীন করতে চাচ্ছেন ইলন মাস্ক। টুইটারের মাধ্যমে মানুষ পাবে বাকস্বাধীনতা–এমনটাই বলছেন মাস্ক। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। টুইটারের সাবেক কর্মীরা বলছেন, এরই মধ্যে টুইটার চাইল্ড পর্নো বন্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে; এর মধ্যে এ ধরনের স্বাধীনতা দিলে সাইটটিতে নানা ধরনের স্পর্শকাতর জিনিসের বন্যা বয়ে যাবে, যা মাস্ক আদৌ সামাল দিতে পারবেন কি না সন্দেহ।

এ ব্যাপারে মাস্ক বলেন, এটা এমন নয় যে যাচ্ছেতাই পোস্ট করা যাবে। বাকস্বাধীনতা ও ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। টুইটার এমন একটি জায়গা, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা নির্বিঘ্নে তাদের পণ্য প্রচার করতে পারবেন।

তবে মাস্কের এ আহ্বানে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংঘাত ছড়ানোর অভিযোগে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টটি নিষিদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ডিমাসিমো গোল্ডস্টেইনের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ডিমাসিমো বলেন, ট্রাম্পের ফিরে আসাকে উদারনৈতিক মানুষজন ভালোভাবে নেবে না। এতে টুইটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে তারা। বড়সংখ্যক গ্রাহক টুইটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো এখানে টাকা ঢালার ঝুঁকি নেবে না।

এদিকে চলতি বছর মে মাসে মাস্ক জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল মিডিয়া রেগুলেশন আইনকে সমর্থন করেন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রদত্ত আইনানুসারে কেউ যদি স্পর্শকাতর কিংবা বৈষম্যমূলক কোনো কনটেন্ট পোস্ট করে ও প্রতিষ্ঠানটি তা সরিয়ে না নেয়, তাহলে প্ল্যাটফর্মটিকে বৈশ্বিক লভ্যাংশের ৬ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে, যা মাস্কের আদর্শ ও চলমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নে নয়, এশিয়ার অনেক দেশেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্পর্শকাতর পোস্ট দিলে সে দেশের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে মাস্কের পরিকল্পনা কতটা আলোর মুখ দেখবে, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে টুইটারের এক সাবেক বোর্ড সদস্য গোল্ডম্যান বলেন, মাস্ক টেসলার মাধ্যমে চীনে ব্যবসা করছেন। এখানে মাস্কের প্রায় ১৪ বিলিয়নের ব্যবসা। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো নয়। এমনও তো হতে পারে, মাস্ক তার গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য শত্রুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। টুইটারকে মাস্ক একটি ডেটা বিক্রির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন–এ সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের জন্য টুইটার কেনার থেকে রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে নিজের আদর্শে শক্ত থেকে টুইটার থেকে লাভ তুলে আনা চ্যালেঞ্জিং হবে মাস্কের জন্য–এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *