কেন অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন ডলি জহুর, কী বললেন অভিনেত্রী?

কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর। মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমা- সব মাধ্যমে সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। অভিনয়ের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এখন অভিনয়ে নিয়মিত দেখা যায় না তাকে। কাজের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি নতুন একটি ধারাবাহিক নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সিনেমার ব্যস্ততা একদমই নেই। এসব বিষয় নিয়ে আজকের ‘হ্যালো…’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি।

স্বদেশ নিউজ২৪: অভিনয়ে আপনাকে এখন খুব একটা দেখা যায় না। সিনেমা তো প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, নাটকেও অনিয়মিত। কেন?

ডলি জহুর: একঘেয়েমি চলে এসেছে। কারণ এখনকার অধিকাংশ কাজেই ঘুরেফিরে একই গল্প ও চরিত্র। তাই ইচ্ছা করে না আর অভিনয় করতে। সিনেমা ছেড়েছি এজন্যই। দেখা যায় বয়সের কারণে এখন আমাকে মা চরিত্রের জন্যই বেশি ডাকা হয়। কিন্তু সেখানেও পর্দায় উপস্থিতি থাকে কম। চরিত্রের কোনো গুরুত্বও থাকে না। এসব চরিত্রে কাজ করতে চাই না। নাটক এখনো করি, তবে ব্যতিক্রম কিছু পেলে। জীবনে যা অর্জন করেছি, মানুষের যতটা ভালোবাসা পেয়েছি এটা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।

স্বদেশ নিউজ২৪: কাজ না করার জন্য কি আফসোস হয়?

ডলি জহুর: আফসোস না ঠিক, তবে কষ্ট হয়। একজন অভিনয়শিল্পীর যে অভিনয়ের ক্ষুধা সেটা মেটানোর মতো কাজ এখন করতে পারছি না। এ জায়গাটায় একটু কষ্ট হয়। কারণ, আমি পেশাদার অভিনয়শিল্পী। সারাটা জীবন অভিনয় করেই কাটিয়ে দিয়েছি। যখন যে চরিত্র পেয়েছি, সেটা যেন ঠিকঠাক মতো করি, সে চেষ্টা করেছি। কখনো সম্মানির কথা ভাবিনি, শুধু অভিনয়টাই মন দিয়ে করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি শুধু অভিনয়ের জন্যই। আর কিছু পারি না, তাই এখনো অভিনয়ই ভালো লাগে।

স্বদেশ নিউজ২৪: বর্তমান ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার অভিমত কী?

ডলি জহুর: এখন তো মানুষের মধ্যেই নিখাদ ভালোবাসার ব্যাপারটি আর নেই। এখন আবেগ ও ভালোবাসা সবই আমার কাছে কৃত্রিম মনে হয়। সবাই এখন নিজেদের পকেট ভারী করা নিয়েই ব্যস্ত। কেউ ইন্ডাস্ট্রির বা সমাজ ও দেশের মঙ্গল হোক, সেটা চায় না। অনেকে এখন নিজের পাশের মানুষটাকেও আপন মনে করতে পারে না। ভালোবাসতে পারে না। আমরা কেমন জানি দিন দিন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছি। যেখানে চারপাশের মানুষের মধ্যে এত পরিবর্তন, সেখানে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আর আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে এ বয়সে এসব দেখতে খারাপ লাগে।

স্বদেশ নিউজ২৪: আপনার একমাত্র সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। চাইলেই তো তার কাছে চলে যেতে পারেন…

ডলি জহুর: মাঝে মাঝে মনে হয় চলেই যাই। কিন্তু আবার যখন দেশের মানুষের কষ্ট দেখি, তখন মনে হয় এদের ছেড়ে কোথায় যাব। ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন তেমন কাজ নেই, অনেকেই বেকার। দেশে থাকলেও মনে হয় অন্তত ওদের পাশে তো আছি। দূরে গেলে মন আনচান করে। আর ওখানে (অস্ট্রেলিয়া) গেলে মনে হয় আমি যেন একটি গণ্ডির মধ্যে বন্দি হয়ে আছি। আমার ভালো লাগে না। তাই চলে আসি। এখানে আমার খোলা আকাশ, পরিচিত মানুষজন, চেনা পরিবেশ এসবেই আমার আনন্দ।

স্বদেশ নিউজ২৪: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আরও অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। আপনার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার কী?

ডলি জহুর: মানুষের ভালোবাসা। শিল্পী জীবনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, যা বলে শেষ করতে পারব না। দর্শকই আমার মাথার মুকুট। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অবশ্যই বড় কিছু। কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসাও কোনোভাবে উপেক্ষা করা যাবে না। সব সময় মনে করি, দর্শকদের ভালোবাসা অনেক বড় কিছু। তাদের ভালোবাসা নিয়েই একজন শিল্পী সামনে এগিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *