॥ রবিবার থেকে কালো গ্লাসের গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান ॥
ডেস্ক রিপোর্ট : সারাদেশে কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ গ্লাসযুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধে রবিবার থেকে অভিযানে নামছে ট্রাফিক পুলিশ। সারাদেশে গুম, অপহরণসহ নানামুখী অপরাধ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান শুরু হচ্ছে। তবে এ অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবশিত হতে পাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বিশেষ ধরনের দামি গাড়িকে এ অভিযানের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর অনেক গাড়ির মালিক নিজ উদ্যোগে গাড়ির কালো গ্লাস অপসারণ করতে শুরু করেছেন। কালো গ্লাসের জায়গায় তারা লাগাচ্ছেন স্বচ্ছ গ্লাস। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা যায়, আগে মানুষ স্বচ্ছ গ্লাস বদলিয়ে কালো গ্লাস লাগাতে পছন্দ করত। কয়েকদিন ধরে তারা নতুন কোনো কালো গ্লাস লাগাচ্ছেন না। ভিড় বাড়ছে স্বচ্ছ গ্লাস লাগাতে। আগে যেখানে দিনে একটি স্বচ্ছ গ্লাসও লাগানো হতো না, সেখানে এখন দিনে ৮-১০টি গাড়ির স্বচ্ছ গ্লাস লাগানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বচ্ছ কাচের চাহিদা বাড়ার পাশপাশি গাড়ির জানালায় লাগানোর অস্বচ্ছ ফিল্ম, পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় কৃত্রিম আবরণ বিক্রিও গেছে কমে। গাড়ির কাচ পরিবর্তন করতে আসা এক চালক বললেন, সরকারের নির্দেশ মানতে সবাই বাধ্য। তাই কাচ পরিবর্তন করা হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে বিজয়নগর মাহতাব সেন্টারের একটি ওয়ার্কশপে গাড়ির গ্লাস বদলাচ্ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ। কোনো অপরাধের সঙ্গে আমরা সংশ্লিষ্ট নই। শুনছি গাড়ির কালো গ্লাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তাই ঝামেলা এড়াতে নিজ গাড়ির গ্লাস বদলিয়ে ফেলছি। ওই ওয়ার্কশপের মালিক জানান, গত কয়েকদিনে স্বচ্ছ গ্লাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী, গ্লাস না পাওয়ায় এর দামও বেড়ে গেছে।
গাড়ির কাচ ব্যবসায়ী জয়নাল জানান, আগের মতো আর রঙিন কাচ বিক্রি হচ্ছে না। উল্টো অনেকে আসছেন সাদা কাচ কিনতে। তিনি জানান, বাজারে যে পরিমাণ কাচ মজুদ ছিল চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা প্রায় শেষ। এ সুযোগে বেশ কিছু ব্যবসায়ী কাচের দাম বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে আমদানি করা কাচ বাজারে এলে দাম কমার সম্ভাবনা আছে।
পুলিশের সাবেক আইজি নূরুল হুদা বর্তমানকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে না। কারণ কোনো কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার কোনো কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না— এটি কাম্য হতে পারে না। ওই আদেশের আওতায় প্রকারান্তরে কেবল কম দামি গাড়ির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেসব গাড়ির কালো গ্লাস ফ্যাক্টরিতে নির্মিত অবস্থায় বিল্ট ইন করা সেসব গাড়িকে অভিযানের বাইরে রাখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী, সব গাড়ির গ্লাসই স্বচ্ছ হতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন সংযোজন করে সব ধরনের কালো গ্লাসের গাড়ির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
সাবেক আইজিপি এওয়াইবি সিদ্দিকী বলেন, এটি একটা কমন সেন্সের বিষয়। যেভাবে আদেশ জারি করা হয়েছে তাতে কোনো কাজ হবে না। যেহেতু বিল্ট ইন করা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তাহলেতো আপরাধীরা অপরাধমূলক কাজে এখন থেকে বিল্ট ইন করা গাড়ি ব্যবহারের দিকেই মনোযোগী হবে।
জানতে চাইলে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বর্তমানকে বলেন, আদেশ জারি করেছে মন্ত্রণালয়। আমি এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আপনি ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
ট্রাফিক পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মীর রেজাউল আলম জানান, রবিবার থেকে আমাদের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তা অব্যাহতভাবে চলবে। মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, শনিবারের পর যেসব গাড়িতে কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ গ্লাস দেখা যাবে সেসব গাড়ির বিরুদ্ধে মোটরযান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব গাড়িতে গ্লাসের ওপর কৃত্রিম অবরণ দেয়া থাকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় মূলত সেসব গাড়িকে মেনশন করতে চেয়েছে। যেসব গাড়ির গ্লাস ফ্যাক্টরিতে নির্মিত অবস্থায় সংযোজিত সেসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন— জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, এটি মূলত সরকারের বিষয়। পুলিশ আইন প্রণয়ন করে না। আইন বাস্তবায়ন করে। আমাদের ওপর যখন যেভাবে আদেশ আসে, তখন সেভাবে পালনের চেষ্টা করি।
ট্রাফিক পুলিশের উপকশিনার (দক্ষিণ) খান মো. রেজোয়ান বলেন, যেসব গাড়ি মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমাণ্য করবে আমরা কেবল সেসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাই করবো না, গাড়ি আটক করে ব্যবস্থা নেব। চেকপোস্ট বাড়াব। র্যাকারি করব। বিশেষ ধরনের গাড়ির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না— জানতে চাইলে খান মো. রেজোয়ান বলেন, এটি পলিসি ম্যাকিংয়ের বিষয়। ট্রাফিক পুলিশের উপকশিনার (পূর্ব) ইকবাল হোসেন বলেন, যাবা পূর্বানুমতি নিয়ে কালো ক্লাসের গাড়ি চালাচ্ছে রবিবার থেকে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সব সময় সর্বশেষ আইনকেই প্রাধান্য দেয়।
উল্লেখ্য, গত ৬ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— দেশে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ তৎপরতায় অপরাধীরা কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ গ্লাসযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছে। এ কারণে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের গাড়ির ভিতরের লোকজন বা পরিবহন করা বস্তু শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই গাড়ি ব্যবহারকারী অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল মাইক্রোবাসে কালো, রঙিন, মার্কারি বা অস্বচ্ছ গ্লাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে যেসব গাড়ির সামনের উইন্ডশিল্ড, দুই পার্শ্বের জানালা ও পিছনের কাচ ফ্যাক্টরিতে নির্মিত অবস্থায় সংযোজিত (বিল্ট-ইন) সেগুলোর ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। বিল্ট-ইন ছাড়া সব গাড়ির জানালায় আলাদাভাবে লাগানো রঙিন, কালো, মার্কারি, টিনটেড, অস্বচ্ছ ফিল্ম, পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় কৃত্রিম আবরণ ১০ মের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে আইনশৃক্সখলা রক্ষাবাহিনী যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বর্তমান