আওয়ামী লীগে বাড়ছে দলীয় কোন্দল, সংঘাত আর নতুন এমপি-মন্ত্রীর বলয়। প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে দলের ভেতরে নানা পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন অনৈতিক কাজে। ঠিক এ মুহূর্তে দলের নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। গত দুটি মন্ত্রিসভা বৈঠকেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত।
নারায়ণগঞ্জ ইস্যুতে সারা দেশেই তাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন। দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। এর কারণ, তার জামাতা র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ। প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তো আছেই, টকশো-তে মোফাজ্জল হোসেন বারবার আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে উঠেছেন। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় দলে তার ‘ইমেজ’ এখন সবচে নীচের দিকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। অপরাধী যেই হোক, সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ এর দায় নেবে না।
জানা গেছে, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে পড়তে চান না। কারণ বেশকিছু প্রশ্নের মুখে তাকে পড়তেই হবে। যার উত্তর মায়ার জানা নেই। অথবা তিনি ঠিকভাবে জবাবও দিতে পারবেন না। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। অপহরণে দুদিনের মাথায় র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ কয়েক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এর মধ্যে নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডে র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলার পর তারেককে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। তারেক সাঈদ মাহমুদ সম্পর্কে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।
ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঢাকার বাইরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, গণতান্ত্রিক অবস্থানে থেকে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। দলীয় সঙ্কীর্ণতার কারণে কোনো অপরাধীকে মুক্ত করা হবে না।
একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের যারাই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে বা দলীয় কাজে আসছেন তারা এ ঘটনায় পুরো দায় চাপাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর। তারা চান কঠোর অ্যাকশন। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা জানান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ব্যক্তিগত সমস্যা দল ‘বহন’ করতে পারে না। সুতরাং একজন ব্যক্তির জন্য দল বিতর্কিত হোক তা দলের কেউ চায় না।
নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সিনিয়র একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা নিয়ে দলের এক নীতিনির্ধারক জানান, প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট মিটিং ডেকে বিয়ষটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। কাজেই অপরাধী যেই হোক, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।
মধ্যম সারির আওয়ামী লীগের এক নেতা কথা প্রসঙ্গে বলেন, অপহরণ ও খুনের ব্যাপারে সরকার খুবই ‘কঠোর’ অবস্থানে রয়েছে। দলের সভাপতি এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেবেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, বিষয়টিকে কোনোভাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দলীয় ফোরামে বলেছেন। একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে কোনো শক্তিমান গডফাদারকেও ছাড় না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কারণ, দলের একজন ব্যক্তির জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হোকে তা চান না প্রধানমন্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফাঁসির রায় হয়েছে। এই ঘটনাতেও যদি সরকারের ঘনিষ্ঠ কেউ থেকে থাকে তাহলে তাকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে সরকার সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
Leave a Reply