বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যায় বিশ্ববিবেকের নিশ্চুপ থাকা নিয়ে ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনতাকে যে বর্বর হামলার মুখে পড়তে হয়েছে, তার গভীরতা ও মর্মান্তিকতা উপলব্ধি করার জন্য। তবে যে অভিযোগ তিনি বিশ্ববিবেকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে করছেন, সেটা মনে হয় যথাযথ হচ্ছে না।
বিশ্ববিবেক গাজার মর্মান্তিকতা দেখে চুপ করে বসে নেই। বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষ ও রাষ্ট্র এই বর্বরতার নিন্দাই কেবল করছে না, বরং সেই সঙ্গে নিজেদের সাধ্যমতো যতটা সম্ভব পদক্ষেপও এর বিরুদ্ধে নিচ্ছে। তবে যারা নীরব থেকে সেই গণহত্যার পেছনে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তো জানি তারা হচ্ছে বরাবরের সেই বিবেকহীন গোষ্ঠী, বিশ্বজুড়ে অশান্তির ঝড় তুলে নিজেদের ফায়দা তুলে নিতে যারা সব সময় ব্যস্ত। আর সেই বিবেকহীনদের কাতারে বিশ্বের তথাকথিত সংবাদমাধ্যমের মোড়লেরা যুক্ত হওয়ায় বিশ্বের যে বিবেক সেই অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, সেই সংবাদ থেকেও আমাদের হতে হচ্ছে বঞ্চিত। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের অঙ্গুলি সেই সব দিকে নির্দেশিত হলে সেটা মনে হয় আরও অনেক বেশি যুক্তিসংগত হয়ে উঠতে পারত। কেননা বারাক ওবামা বলুন, ডেভিড ক্যামেরন বলুন, ফ্রাঁসোয়া ওলঁাদ বলুন, কিংবা আমাদের ধর্মের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করা রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহদের কথাই বলুন, বিশ্ববিবেক বলতে যা বোঝায় তার কোনো কিছুই কখনো এদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায়নি এবং ভবিষ্যতেও যাবে না। আর গাজার ঘটনায় এরাই আছে সবচেয়ে বেশি নীরব এবং বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের মোড়লেরা এদের তোষামোদে সদা ব্যস্ত থাকায় সত্যিকার অর্থে বিবেক জাগ্রত হওয়ার খবর থেকেও আমরা হচ্ছি বঞ্চিত। বিশ্ববিবেক কোনো অবস্থাতেই নিশ্চুপ বসে নেই।
পশ্চিমের নেতৃস্থানীয় সংবাদমাধ্যম সেই সব সংবাদ কেবল সংবাদ চেপেই রাখছে না, বরং উল্টোভাবে এর সঙ্গে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল পদক্ষেপ, সেই তালিমও বিশ্ববাসীকে দেওয়ার ব্রত নিয়ে ময়দানে এরা উপস্থিত আছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষা করায় ব্রতী হওয়ায় তাঁর প্রশংসা দেশটির সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিনিধি করায় পশ্চিমের সেই প্রভুতোষণের সংবাদমাধ্যম ও তাদের এদেশীয় অনুরাগীদের কাছে সেটা হয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যমের হঠকারিতার জুতসই এক দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে গাজা নিয়ে টুঁ–শব্দটি না করায় এদের মনোভাব এবং সত্য গোপনের সর্বাত্মক প্রয়াসের মধ্যে এদের অনুসারীরা খুঁজে পায় তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ার প্রমাণ।
এবার দেখা যাক বিশ্ববিবেক বলতে আমরা যা বুঝি তা ঠিক কী বলছে গাজা নিয়ে এবং কোন পদক্ষেপই বা এদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে ইসরায়েলকে বুঝিয়ে দিতে যে তাদের আচরণ মানব সভ্যতা বলতে আমরা যা বুঝি তার পরিপন্থী।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের যে সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের আবির্ভাব নিশ্চিত করা গিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পেছনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন তখন করে লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রসমূহ। প্রস্তাব পাস হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৩টি ভোটের মধ্যে ১২টি এসেছিল লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে সেই তখন থেকেই সেই সব দেশের সঙ্গে বজায় আছে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। শুধু তা-ই নয়, আর্জেন্টিনার মতো কয়েকটি লাতিন দেশে বসবাসরত ইহুদি জনগোষ্ঠীও সেই সম্পর্ক গভীর করে তোলায় অবদান রাখে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যায় লাতিন দেশগুলো ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিক পর্যন্ত ছিল মার্কিন অবস্থানের বলিষ্ঠ সমর্থক। আর সেই সমর্থনের প্রকাশ এরা সব সময়