আজ পহেলা আগস্ট। শোকাবহ মাস আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
ইতিহাসবিদদের মতে, বীর বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয় এই আগস্ট মাসেই। কারণ, ৭১ এ পরাজিতরা চেয়েছিল, বাঙালির অগ্রগতির রাশ টেনে ধরতে। তাই প্রতি বছর আগস্ট মাস নতুন করে ভাবতে শেখায় বাঙালি জাতিকে। প্রতিশোধের চেতনায় শাণিত করে সবাইকে।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় আপোষহীন নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে। বাঙালি জাতি পেয়েছিল বহুল আকাঙ্ক্ষিত প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মানচিত্র। কিন্তু বাঙালির বিজয়ের সকল কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশে যায় ১৯৭৫ সালের এই আগস্টে এসে।
সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য ১৫ই আগস্টের গভীর রাতে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া।
দীর্ঘদিন পর জাতির পিতার এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকর করা হলেও আগস্ট মাস বাঙালির ধমনিতে প্রবাহিত করে শোকের শোণিতধারা, জাগিয়ে তোলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যয়।
এ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটি বাংলাদেশকে হত্যার একটি ষড়যন্ত্র ছিল। ৭৫’র ১৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশ উল্টা পথে হাটতে শুরু করেছিল।’
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ইতিহাসের রাশ টেনে ধরতে চেয়েছিল। তারা চাচ্ছিল ৭১ সালে যে পরাজয় ঘটেছিল সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া।’
ইতিহাসবিদদের মতে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি সেই নীল নকশাকারীরা। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ আর তার কর্ণধার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয় আওয়ামী লীগের জনসভায়।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি মহল যখন জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তারা খুব সহজেই ক্ষান্ত দেয় না। তার মানে এই নয় যে, তারা খুব শক্তি সঞ্চয় করেছে। কারণ তরুণরা জাগ্রত হচ্ছে।’
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা করবার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটি কোনো দিনই সম্ভব হবে না। কারণ আওয়ামী লীগের শেখর খুব গভীর।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মতো গ্রেনেড হামলার বিচারও আইনি পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন এ বিশিষ্টজনেরা।
এদিকে, আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে। এসময় মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এসময় জাতির জনকের খুনিদের বিচারের দাবি জানায় নেতা-কর্মীরা।
একইসাথে জাতির জনকের রুহের মাগফেরাত কামনা করেও দোয়া করা হয়। শোককে শক্তিতে পরিণত করার মধ্য দিয়েই আগামী ৪০ দিন বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ ও এর সমমনা সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনগুলো।