জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবির সম্পাদকমণ্ডলীর অনুমতি ছাড়াই হেফাজতে ইসলামের পরামর্শে ২৯টি পরিবর্তন আনা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইয়ে। তবে এনিয়ে মুখ খুলতে নারাজ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ পরিবর্তন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
‘ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বা হাত করে শঙ্কা হরণ’- রবি ঠাকুরের হৃদয়ে বাংলাদেশ কবিতার পঞ্চম লাইন এটি। এবছর সপ্তম শ্রেণির বাংলাবই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এ কবিতাটিকে। অভিযোগ, এতে বর্ণনা করা হয়েছে দেবী দূর্গাকে।
বই নিয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা বুঝতে পেরেই হয়তো হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, ‘যে বই তোমায় দেখায় ভয়, সে গুলো কোনো বই-ই নয়, সে বই তুমি পড়বে না।’ মর্ম না বুঝে পঞ্চম শ্রেণি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে হুমায়ুন আজাদের এই ‘বই’ কবিতাটিও।
বই ঘেঁটে দেখা গেছে, এবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে এভাবে বাদ পড়েছে ১২ টি গল্প-কবিতা। আর, তার বদলে ১৭টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ যোগ হয়েছে।
গতবছর কউমি ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বিবৃতি দেয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই নিয়ে। সেখানে ১২টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী অভিযোগ করে বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো সংগঠনটি। ‘বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জাতিস্বত্ত্বা’র সার্থে যোগ করতে বলা হয়েছিলো ১৭টি লেখা। নতুন বছরের বইতে মেনে নেয়া হয়েছে এসব পরামর্শ।
যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই কথা বলা নিষেধ।
এ নিয়ে কয়েক দিন আগে দেশের বিশিষ্ট ৮৫ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, পাঠ্যবইয়ে ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির’ অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। আপস
তাদের একজন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এ ভুল ও পরিবর্তন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
বইয়ের বিষয় বদলের জন্য ১৪ জনের সম্পাদকমন্ডলী থাকলেও, এ বদল আনা হয়েছে কারো অনুমতি ছাড়াই।
পাঠ্যবই বিতর্কে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। ভুলের সংশোধন না হলে সম্মিলিত ভাবে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো।