বর্তমান সরকারের আমলে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে সরকারের উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। সরকারের আট বছরে ঠাকুরগাঁওয়ের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ঘরে ঘরে বিদ্যুায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষনীয়। যা চার দলীয় সরকারের আমলের চেয়ে দ্বিগুন উন্নয়ন হয়েছে বলে এ জেলার সাধারণ জনগন তা স্বীকার করতে বাধ্য।
একটি জেলার উন্নয়নে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল নির্মান ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেই কি উন্নত জেলায় পরিণত হবে সেটি কিন্তু না ?
একটি জেলাকে উন্নত জেলায় পরিনত করতে হলে দরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন।
দেশের বিভিন্ন জেলাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সেই সব এলাকায় গড়ে উঠছে ভারী শিল্প কারখানা, শিক্ষার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা সেবা জনগনের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজ। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে……?
আর জনগনের সকল প্রত্যাশা-দাবি ও সম্ভাবনা সমস্যার দাবি গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরার জন্য স্থানীয় এমপি, সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব অপরিহার্য।
কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন জেলায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল নির্মান ও ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়নের জন্য যা বরাদ্ধ পাশ হয়েছে ঠিক ঠাকুরগাঁও জেলায় উন্নয়নের জন্য সেই বরাদ্ধ পাশ হয়েছে।
কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে সরকার দলীয় নেতারা দাবি করছে উন্নয়নে ভরপুর ঠাকুরগাঁও। অপরদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতির জন্য স্থানীয় নেতারা সাধারণ মানুষের মূল দাবি গুলো দেশনেত্রীর কাছে পৌছাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে উন্নয়ন শুধু রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। অন্যান্য জেলার উন্নয়ন লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁও।
জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ঢাকা-ঠাকুরগাঁও আন্ত:নগর ট্রেন চালু হবে, পরিত্যক্ত বিমান বন্দরটি পুন:রায় চালু হবে, বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি চালু হবে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারনে শিক্ষার হার থেকে পিছিয়ে জেলার মানুষ। তাই কম খরচে লেখা-পড়া সুযোগের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করে আসছে বেশির ভাগ অভিভাবক, বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ ।
জেলার মানুষের এই সকল দাবি গুলো বাস্তবায়নের জন্য যে দলের সরকারই ক্ষমতা যায় নেতারা নানা রকম প্রতি্শ্রুতি দিয়ে জনগনের সাথে ভোটের রাজনৈতি শুরু করেন। ক্ষমতায় বসলে প্রতি্শ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য লোক দেখানো কিছু উদ্যোগ গ্রহন করলেও তা অন্ধকারেই রয়ে যায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের প্রভাবশারী এমপি ও দলীয় নেতারা রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজের ভবন, ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন অব-কাঠামো উদ্বোধন করতে গিয়ে বক্তব্যে বলেন, শীঘ্রই আন্ত:নগর ট্রেন চালু হবে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে, রেশম কারখানা চালু, বিমানবন্দর চালু, অর্থনৈতিক অঞ্চলে রুপান্তিত হবে, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে ঠাকুরগাঁও। কিন্তু প্রতিশ্রুতি গুলো শুধু বক্তব্যের মধ্যেই ?
দেশের অব্যাহত উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় যে, সারা দেশে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদন পায় দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়। এর একটি হলো জামালপুরে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যটি নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নতুন দু’টি নিয়ে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪২-এ।
কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মনে হয় স্থানীয় এমপি/রাজনৈতিক নেতারা সরকার প্রধানের কাছে জেলার মানুষের দাবির প্রস্তাবনা তুলে ধরেনি। তাই আমাদের দাবি হয়তো পূরণ হয়নি?
২০১৪ সালে দেশে অনুমোদন হয়েছে নতুন ৬টি মেডিকেল কলেজ। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ, লক্ষীপুর ও অন্য ৪টি জেলায়। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই চিকিৎসক ও দক্ষ জনবলের অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত জেলার লাখ লাখ মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষ রাজধানীসহ বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু দীর্ঘদিনও জেলার স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির জন্য সরকার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি, ভবনের সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মান করলেও সেবার মানের জন্য চিকিৎসকের প্রসার ঘটায়নি।
কৃষিভিত্তিক ঠাকুরগাঁও জেলা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য পায় না কৃষক। কৃষক ও সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে ঠাকুরগাঁওকে গড়ে তোলা। উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির জন্য সড়ক পথে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ গুনতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারি দলের ও বিগত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতারা ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি ভিত্তিক অথনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।
সরকার তো জনগণের কথা চিন্তা করে ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ করেছেন। কিন্তু ঢাকা-ঠাকুরগাঁও আন্ত:নগর ট্রেন চালু হয়নি। ট্রেন না চালুর পেছনে কোন অপশক্তি কাজ করছে কি না সেটি সাধারণ জনগণ প্রশ্ন তুলেছে? কেন এত টাকা ব্যয় করে তাহলে রেলপথ নির্মান করলেন সরকার। সাধারণ মানুষ আন্ত:নগর ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে কেন?
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতারা বিভিন্ন জনসভায় কিছু দিন আগে বলছিলেন, ইতোমধ্যে বিমান বন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের টেন্ডার হয়ে গেছে, যেকোনো সময় কাজ শুরু হবে। অথচ দুই বছর পর যখন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন পুনরায় ঠাকুরগাঁওয়ে আসলেন তখন তিনি বললেন, বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব নয়।
এরপর আওয়াজ উঠল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও সফর করবেন। আবারো স্থানীয় রাজনীতিবিদরা জানালেন, এবার বিমানবন্দর ও ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রেলপথ চালুর ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। মজার ব্যাপার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও আসার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্তই নেন নি।
দীর্ঘ আট বছরে দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ের নেতারা সাধারন মানুষের মূল দাবি তুলে ধরতে ও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও নেতারা ব্যর্থতা নাই স্বীকার করেন, তাহলে কেন ঠাকুরগাঁওবাসী উপরোক্ত দাবি গুলো থেকে বঞ্চিত? আপনারা যদি প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হোন তাহলে জনগনকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রত্যারনা থেকে বিরত থাকুন। জনগনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলাকে উন্নত করার জন্য সকল দাবি বাস্তবায়ন করে নিবেন। কারন প্রধানমন্ত্রী আপনাদের মত নেতাদের কথা রাখতে না পারলেও আমাদের মত সাধারণ মানুষের কথা কখনো ফেলতে পারবে না এটা বিশ্বাস করি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার কাছে ঠাকুরগাঁও জেলাবাসীর দাবি, স্বল্প খরচে জনসাধারনের যাতায়াত, জেলার উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্যের নিশ্চিত করনে শীঘ্রই ঢাকা-ঠাকুরগাঁও সরাসরি আন্ত:নগর ট্রেন চালুর নির্দেশনা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা। দারিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি চালুর নিদের্শনা প্রদান। হত দারিদ্র মানুষে স্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারি হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজে রূপান্তিত করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। রাজধানীর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করনে পরিত্যক্ত বিমানবন্দটি চালু করা। বিমানবন্দরটি চালু করলে দেশের ও দেশের বাইরের অনেক উদ্যোক্তা এই অঞ্চলে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে অনেকাংশে।
আগের পাঁচ বছর এবং বর্তমান তিন বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দূর। গত ৮ বছরে চোখে পড়ার মতো অনেক উন্নয়ন করেছেন। প্রমান করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে উন্নয়ন হয়।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দরিদ্রসীমার নিচে ছিল ৯২ শতাংশ মানুষ। আর মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় ছিল ১০০ ডলার। সময়ের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে সাড়ে ২৩ শতাংশে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষের দারিদ্রের হার বেশি কমেনি?
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ উন্নয়ন থেকে আর বঞ্চিত হতে চায় না। অন্যান্য জেলার মত গণ মানুষের দাবি বাস্তবে রূপ নিলে অবশ্যই উন্নত জেলায় পরিনত হবে, এগিয়ে যাবে ঠাকুরগাঁও। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতি আশু কামনা করছেন জেলার সাধারন মানুষ।