হামিম রাফি , নিউজ দিনে খুব একটা টের পাওয়া যায় না। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়লেই ঠাণ্ডা বাতাসটা গায়ে লাগে।
তবে খুব বেশি শীতল নয়। যেন আগমনী বার্তা দিচ্ছে শীত। এমন সময় একটু ওম পেলে মন্দ কী। শীত এখনো জেঁকে বসেনি। ফলে জবুথবু হয়ে থাকার মতো পোশাকের প্রয়োজনও এখনো পড়েনি। সুতি, খাদি কিংবা ডেনিম কাপড়ে তৈরি হালকা পোশাকই চলছে এখন। নিত্য উপহারের কর্ণধার বাহার রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে শীতের স্থায়িত্বও কম। ভারী শীতও খুব বেশি পড়তে দেখা যায় না। তাই শহরের মানুষজন হালকা পোশাকই বেশি পছন্দ করেন। শীত নিবারণের পাশাপাশি স্টাইলের প্রতি বেশি মনোযোগী তারা। তবে শহরে প্রকোপটা তত বেশি না হলেও গ্রামে শীত বেশ টের পাওয়া যায়। ’ জেড অ্যান্ড জেড কালেকশনের কর্ণধার ও ডিজাইনার মেহজাবিন মোস্তাফিজ সিমিলি বলেন, ‘এখনো মোটা পোশাকের প্রয়োজন পড়েনি। ফ্যাশন ও প্রয়োজন—দুটোই মিটবে এ রকম পোশাকের প্রতি তরুণীদের আগ্রহ বেশি। দু-তিন ধরনের কাপড়ের মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে হালকা শীতের পোশাকগুলো। কামিজ কিংবা টপের মতো অন্য পোশাকের ওপরে পরা যাবে অনায়াসে। ’
এ সময় পরার জন্য ফ্যাশন হাউসগুলো এখন বিভিন্ন নকশার ও কাপড়ের তৈরি পঞ্চো, লং কটি, ক্রেপ, শ্রাগ, শাল, জাম্পস্যুট, ডেনিম শার্ট, জ্যাকেটসহ হরেক রকম পোশাক নিয়ে এসেছে। হালকা শীতে পরার উপযোগী এসব পোশাক নিয়ে নানা নিরীক্ষা করেছেন ডিজাইনাররা। ফ্যাশন হাউস সাদাকালোর কর্ণধার তাহসীনা শাহীন বলেন, ‘এ বছর শাল নিয়ে নিরীক্ষা করেছি। শালের আদলে তৈরি লং কটি এনেছি। বরাবরের মতো রং হিসেবে সাদা-কালোই থাকছে। কোনোটায় ব্লক, কোনোটায় স্ক্রিন প্রিন্ট, কোনোটায় আবার অ্যামব্র্রয়ডারি নকশা করা হয়েছে। পঞ্চোতেও থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। ’
উলে বোনা পঞ্চো এনেছে ফ্যাশন হাউস কে ক্রাফট। প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইনার শায়লা নূর বলেন, ‘এখন পঞ্চো-কটি এসবই চলছে। পঞ্চোতে বোতাম ও পাথর বসিয়ে নকশায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। হুডি ও ডাবল কাপড়ের তৈরি কটিও রেখেছি। শীতে একটু ডার্ক কালারই তরুণীদের বেশি পছন্দ। সেটা মাথায় রেখেই কালো, মেরুন, সবুজ, নীল, বেগুনি রঙের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শালের পাড় ও আঁচলে মেশিন এমব্রয়ডারির নকশা থাকছে। ’
খাদি কাপড়ে তৈরি শাল এনেছে নিত্য উপহার। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও ডিজাইনার বাহার রহমান বলেন, ‘এখনকার তরুণ-তরুণীরা স্টাইলিশ শালই বেশি পছন্দ করে। কোনোটায় শালের পুরোটা জুড়ে কোনোটার আবার এক প্রান্তে ভিন্ন রঙের টাইপোগ্রাফির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা আবুল হাসানের জনপ্রিয় কবিতা বা কবিতার অংশবিশেষ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কালো রঙের শালগুলোতে সাদা রঙের স্ক্রিন প্রিন্টের নকশা করা হয়েছে। ’
দেশি পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা পোশাকের কদর কম নয়। বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘ফ্যাশনে বেশ কয়েক বছর ধরেই ফিউশনের জয়জয়কার। শীতের পোশাকেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এবার জ্যাকেট, হুডি, ভারী কাপড়ের ফুল হাতা টি-শার্ট, ব্লেজার, মাফলার ও সোয়েটার এনেছি আমরা। দেশীয় পোশাকের মধ্যে খাদির শালে নতুনত্ব রয়েছে। নকশায় বৈচিত্র্য আনার জন্য অফহোয়াইট রঙের শালের পাড়ে মেশিন এমব্রয়ডারির মাধ্যমে ভিন্ন রঙের ফুলেল নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ’
জেড অ্যান্ড জেড কালেকশনের ডিজাইনার মেহজাবিন মোস্তাফিজ সিমিলি বলেন, ‘এই সময় পার্টিতে পরার উপযোগী লং কটি, ফুল হাতা শার্ট, শ্রাগ এনেছি।
শীতও নিবারণ হবে আবার পার্টিতেও গর্জিয়াস লাগবে। সাদা রঙের লং প্যার্টানের পঞ্চোর জমিনে কালো ও লাল রঙের বলপয়েন্ট প্রিন্টের ব্যবহার আছে। নীল রঙের কটির বর্ডার দিয়েছি সোনালি রঙের কাপড়ে। সিল্কের তৈরি স্টাইলিশ শালও আছে, যা পার্টিতে জমকালো ভাব নিয়ে আসবে। জিনস, টাইটস কিংবা সোজা কাটের প্যান্ট বা পালাজ্জোর সঙ্গে ভালো লাগবে। ’
‘পরতে আরাম। ক্যাজুয়াল ও ফরমাল দুটি লুকেই মানিয়ে যায় বলে তরুণ-তরুণীদের কাছে ডেনিমের পোশাকও দারুণ জনপ্রিয়’—বলছিলেন আম্বার লাইফ স্টাইলের ডিজাইনার শাহরিয়ার শাকিল। প্যান্ট-শার্ট তো বটেই, ফুল ও শর্ট স্লিভ জ্যাকেট, ব্লেজার, হুডি, কুর্তি, ফুল স্লিভ স্কার্ট, ফতুয়া সবই হচ্ছে ডেনিম দিয়ে। শাহরিয়ার শাকিল জানালেন, ‘এখন ডেনিমের শার্টই বেশি চলছে। কোনো শার্টের শুধু নিচের দুই পাশে দুটি পকেট। কোনোটা আবার সাধারণ শার্টের মতো একেবারে পকেটবিহীন। কিছু শার্টে প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে, কিছু আছে প্লেট ছাড়া। ফতুয়া ও কুর্তিতে শেডের ব্যবহার নজর কাড়বে। কিছু শার্ট, ফতুয়া ও জ্যাকেট মিলবে, যেগুলোয় বেশ বড় বড় বোতামের ব্যবহার করা হয়েছে। ’
ফ্যাশন হাউস লা রিভের ডিজাইনার আফরিনা হাবিব বলেন, ‘এবারের শীতে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে লং প্যার্টানের পোশাক। এর সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের জ্যাকেট, হুডি, কোট, সোয়েটারের পাশাপাশি দেশি শাল ও একটু ভারী কাপড়ের সালোয়ার-কামিজ বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। রঙেও বৈচিত্র্য রয়েছে। ঘন সবুজ, লাল ও অ্যাশ কালারের পোশাকই বেশি চলছে এখন। ’ পশ্চিমা ফ্যাশনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাহারি ডিজাইনের কুর্তি এনেছে কস্টিউম সিলয়েট। ডিজাইনার মুনিয়া খান বলেন, ‘হাই নেক কলার ও ফুল স্লিভ হাতার কুর্তিগুলোতে ডিজিটাল প্রিন্টের নকশা ব্যবহার করা হয়েছে। চাইলে পুরো হাতার, লম্বা কাটের শ্রাগও পরতে পারেন। তবে পাতলা কাপড়ের তৈরি হলে পরে আরাম পাবেন। তরুণী থেকে মধ্যবয়সী যে কেউ পরতে পারবেন। ’
হালকা শীতে পরার জন্য ব্লেজার বেশ জনপ্রিয়। যেকোনো পরিবেশে মানানসই। শাড়ি বা সালোয়ার যেকোনো পোশাকের ওপর অনায়াসেই পরা যায় ব্লেজার। ব্লেজারে গাঢ় লাল, নীল, হলুদ, মেরুন ও পার্পল রঙের প্রাধান্য। লং ও শর্ট দুই ধরনের ব্লেজার পাবেন।
কোথায় পাবেন
নিত্য উপহার, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, লা-রিভ, জেড অ্যান্ড জেড কালেকশন, আম্বার লাইফস্টাইল, সেইলর, এসটাসি, ক্যাটস আই, ওটু, ওকোড, ইস্টওয়ে, ফ্রিল্যান্ডসহ প্রায় সব নামি ব্র্যান্ডেই মিলবে হালকা শীতের পোশাক। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবাজার, মিরপুরের মার্কেটগুলোতে মিলবে শীতের পোশাক।ডেস্কঃ