ডিএসসিসির এক কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করা হলেও অন্যরা বহাল।
ময়নুল হক মঞ্জু, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ডিএসসিসির ১৯টি বোর্ড সভার ১৫টিতেই অনুপস্থিত।
ডিএসসিসি তার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, রয়েছেন বহাল তবিয়তেই। যদিও স্বদেশ নিউজ২৪ এর কাছে জানিয়েছেন , ‘আমি অসুস্থতাসহ নানা ধরনের সমস্যায় ছিলাম, এজন্য বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারিনি। কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলে আমার জবাব দেব।’
শুধু মঞ্জু নয়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৮ জনই বিভিন্ন বোর্ড সভায় একরকম নিয়মিত অনুপস্থিত থেকেছেন। এর মধ্যে ২৫ (ডিএসসিসির ১৫ ও ডিএনসিসির ১০ জন) জনের অনুপস্থিতি আশঙ্কাজনক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদের ব্যাপারে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
মন্ত্রণালয় তার ব্যাপারে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছে।
আরও জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন অন্য কোনো কাউন্সিলরের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। বোর্ড সভায় উপস্থিত না হওয়ার কারণে তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করার ব্যাপারেও দুই সিটির তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
এ কারণে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, বোর্ড সভায় উপস্থিত না হওয়াসহ অন্য অভিযোগে একজন কাউন্সিলর বরখাস্ত হলেও অন্যরা বহাল তবিয়তে থাকবেন। এটা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে অভিযোগ অনেকের।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম স্বদেশ নিউজ২৪ কে বলেন, ‘কাউন্সিলরদের বোর্ড সভায় উপস্থিত না হওয়া অপরাধ। কিন্তু, সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের ব্যাপারে অভিযোগ না দিলে তো আমাদের কিছু করার নেই।
অভিযোগ দিলে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে ডিএসসিসির এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। যদি এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তবে আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ধারা-১৩ এর উপধারা-১ (মেয়র এবং কাউন্সিলর অপসারণ) এ বলা হয়েছে, মেয়র এবং কাউন্সিলর নিজ পদ থেকে অপসারণ যোগ্য হবেন, যদি তিনি- যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি। এখানে ৫৪ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৮ জন।
ডিএনসিসির ১২টি বোর্ড সভায় ৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৯ জনের উপস্থিতির হার শতভাগ। এছাড়া ১০ জন কাউন্সিলর ৬ থেকে ১২টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের মধ্যে বোর্ড সভায় বেশি অনুপস্থিতির তালিকায় রয়েছেন- ৭টি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ৯টি সভায় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রউফ, ১১টি সভায় ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন, ৬টি সভায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তাহের, ৬টি সভায় ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির, ৯টি সভায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মুজিবুর রহমান, ১০টি সভায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, ৬টি সভায় ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন এবং ৬টি সভায় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা অনুপস্থিত থেকেছেন।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। যেখানে ৭৫ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ২৫ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন। এর মধ্যে গত সাড়ে ৪ বছরে ১৯টি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় শতভাগ উপস্থিত ছিলেন ১৫ জন।
আর ৮৫ জন কাউন্সিলর বিভিন্ন সময়ে অনুপস্থিত থেকেছেন। এর মধ্যে ১৫ জন কাউন্সিলর ৮ থেকে ১৫টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এ ১৫ জনের মধ্যে রয়েছেন- ৮টি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেন মহসিন, ১০টি সভায় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান, ১৩টি সভায় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ৮টি সভায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, ১২টি সভায় ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১১টি সভায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপি, ৮টি সভায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিম, ৮টি সভায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ, ১১টি সভায় ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম সজীব, ৮টি সভায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার পারভেজ বাদল, ১৪টি সভায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান, ৮টি সভায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল, ১১টি সভায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ, ১৫টি সভায় ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু এবং ৮টি সভায় ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন অনুপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক স্বদেশ নিউজ২৪ কে বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতা এবং এলাকার জনসেবামূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে অনেক বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি।’
ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তাহের স্বদেশ নিউজ২৪ কে বলেন, ‘আমি বেশির ভাগ বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলাম। বিষয়টি হয়তো এমন হয়েছে যে, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করে চলে এসেছি।’
ডিএনসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ নিউজ২৪ কে বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকতে পারি না। তবে ওয়ার্ডের সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করছি।’
ডিএসসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার স্বদেশ নিউজ২৪ কে বলেন, ‘বোর্ড সভার চিঠি পেতে দেরি হওয়া বা এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি।’
ডিএসসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন আহমেদ স্বদেশ নিউজ ২৪ কে বলেন, ‘আমি বেশির ভাগ সভায় উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু, আমার উপস্থিতির ব্যাপারে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, সেটা সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। আমি এটা চেক করে দেখব।