ভোলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া হয়েছে। চরাঞ্চলে ঘরে ঘরে মিটার বসিয়ে বিদ্যুতের লাইন চালু করা হয়। গত নভেম্বরে ভোলার সদর উপজেলার মাঝের চর (কাচিয়া ইউনিয়নের অংশ) ও এর পার্শ্ববর্তী দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হয়। চালুর ছয় মাসের মাথায় গত মে মাসের শেষের দিকে এ চরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গত দু’মাসেও বিদ্যুতের লাইনটি চালু না হওয়ায় এ চরের প্রায় সাত শতাধিক গ্রাহক অন্ধকারে জীবন কাটাচ্ছেন। কবে নাগাদ লাইনটি চালু হবে তাও বলতে পারছে না ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। এতে করে অনিশ্চয়তায় মধ্যে রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। অনেকের অভিযোগ, নিম্নমানের ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দেওয়ায় এ ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার কাচিয়া ও দৌলতখানের মদনপুরের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুতের সংযোগ আসায় চরাঞ্চলে নতুন নতুন ব্যবসার খাত খুলেছে। এর মধ্যে অনেকে আছে টিভি, ফ্রিজ, ইলেকট্রনিক্স দোকান, ফটোকপি-কম্পিউটারের দোকান দিয়েছেন। অনেকে রাইসমিল, স’মিল, ফিডমিল, বৈদ্যুতিক সেচপাম্প বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
মদনপুরের পাটওয়ারী বাজারের ব্যবসায়ী আকতার হোসেন জানান, ‘চরের পাটওয়ারী বাজার থেকে টিভি-ফ্রিজ কেনা যাচ্ছে। দোকানগুলোতে ব্যবসায়ীরা কিস্তিতে ফ্রিজ কিনেছেন। অনেকে ঘরে টিভি-ফ্যান কিনেছেন। গত দুই মাস ধরে সেগুলো বন্ধ আছে।
মদনপুরের ইউপি সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গত নভেম্বরে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ দিলে চরাঞ্চল আলোকিত হয়ে ওঠে। চরাঞ্চলের মানুষ শহরের মতো তাদের জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু এরই এক সপ্তাহের মাথায় বৈদ্যুতিক আলো কমতে থাকে।
তিনি আরো জানান, এতো দিন আলো কমলেও কাজ চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তিন মাস পর আলো আরও কমতে শুরু করে। মে মাসের শেষ দিকে আলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে পড়েছে।
চরবাসীর অভিযোগ, মেঘনা নদীর মধ্যে নিন্মমানের কেবল দিয়ে সঞ্চালন লাইন টানায় দ্রুত ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেয়ে, প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো খরচ করে মেঘনা নদীর মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল টেনে গত নভেম্বরে ভোলার সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ সাব-স্টেশন থেকে ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর ও তার পার্শ্ববর্তী মদনপুর ইউনিয়নে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। সেখানকার ৭২০ জন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। লাইনে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটির কারণ জানতে বিআরবি ক্যাবল কম্পানি থেকে মেশিন এনে তারা জানতে পারেন, নদীর মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কী ধরনের ত্রুটি তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
প্রকৌশলীরা আরও বলেন, ক্যাবল তুলে পরীক্ষা করলে বোঝা যেতো কী সমস্যা হয়েছে। কিন্তু মেঘনা নদীর গভীরতা ১২০-৩০ ফুট হওয়ায় ক্যাবল তোলা সম্ভব হয়নি। ক্যাবল তোলার জন্য দেশের সেরা ডুবুরিদের নিয়ে আসা হলেও তারা এসে দেখে বলেছেন, এটা অসম্ভব। হয়তো শীতে পানি ও স্রোত কমলে তখন ক্যাবল তোলা সম্ভব হবে। তখন ত্রুটি বের করে সংস্কার সম্ভব। কিন্তু তখন যদি ক্যাবলের ওপর পলি পড়ে গভীরে চলে যায় তাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
নিন্মমানের ক্যাবল কিনা জানতে চাইলে ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ ভোলার দুর্গম চরাঞ্চল মুজিবনগর, কুকরি-মুকরি, চর জহিরউদ্দিন, মদনপুরসহ ১০টি চরে মেঘনা, তেতুলিয়া নদী ও সাগর মোহনায় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে। কোথাও কোনো ত্রুটি দেখা দেয়নি, একমাত্র কাচিয়া-মদনপুর ছাড়া। একটা কারণ হতে পারে- কাচিয়া পয়েন্টে যেখানে সাবমেরিন ক্যাবল টানা হয়েছে, সেখানে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার মালবাহী শত শত জাহাজ নোঙ্গর করে বিশ্রাম নেয়। ক্যাবল টানার শুরু থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে কথা বলে ও জাহাজ মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে সাবমেরিন ক্যাবলের আশপাশে নোঙ্গর করতে নিষেধ করা হয়েছিল। এমনকি পাহাড়াদারও নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু জাহাজের নাবিকরা সেটা মানেননি। মাস দুই আগেও ঝড় নোঙ্গর করা জাহাজগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর। এতে ধারণা করা হচ্ছে জাহাজের নোঙ্গরের সঙ্গে ক্যাবলে টান পড়ে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যাবস্থাপক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল সংস্কার অথবা বিকল্পভাবে কাচিয়া-মদনপুরের বিদ্যুৎ লাইন চালুর জন্যে কেন্দ্রীয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা সভাও করেছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।