জেল থেকে বন্দি কমাতে উদ্যোগ

central-jail-001 জেল থেকে বন্দি কমাতে উদ্যোগ সারাদেশের কারাগার গুলোতে ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। বন্দির সংখ্যা কমাতে সাধারণ অপরাধে কারাবন্দিদের মুক্তিসহ নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানান, দেশের ৬৮টি কারাগারে ৩৪ হাজার ১৪৬ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতার জায়গায় বন্দি রয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬২ জন। কারাগার গুলোকে মাদকমুক্ত করতে গঠিত টাস্কফোর্স ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কারাগারে প্রবেশ পথ গুলোতে ড্রাগ স্ক্যানার বসানোর কাজ চলছে। পাশাপাশি বন্দিদের কাপড় সেলাই, পোশাক তৈরী, রেডিও-টেলিভিশন-ফ্রিজসহ নানা যন্ত্রপাতি মেরামত, বুননসহ নানা ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে করে কারামুক্তরা অপরাধ প্রবণ না হয়ে কর্মজীবন বেছে নেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের কারাগারে অধিক বন্দির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির উন্নয়ন’ বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত মোস্তফা বলেন, বগুড়া, মাদারীপুর, ঢাকা, কাশিমপুর-১, ২ ও ৩, রংপুর এবং ময়মনসিংহ কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৮ হাজার ২৭৫ বন্দির তুলনায় বন্দি রয়েছে ১৫ হাজার ৭৯৯ জন। এ কয়েকটি কারাগার থেকে ইতিমধ্যে ৩ হাজার ৪৩৬ বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আরো বন্দিদের মুক্তি দিতে কাজ চলছে। বিশেষ করে লঘু অপরাধের বন্দিদের আইনী পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারামুক্তরা যাতে অপরাধ প্রবণ না হয় এজন্য তাদের মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বন্দিদের রাখার অসুবিধা দূর করতে ঢাকার অদূরে কেরাণীগঞ্জে ৪টি নতুন কারগার স্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ দিকে একটি কারাগার চালু হওয়ার কথা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব সিকিউকে মোস্তাক আহমেদ বলেন, কারগারের ধারণ ক্ষমতার অধিক বন্দিদের মুক্তি দিতে গঠিত বাছাই কমিটি কাজ করছে। বিশেষ করে লঘু অপরাধে কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে সবই হচ্ছে আইনের মধ্যে থেকেই। কর্মশালায় অংশ নেয়া ভারতের বন্দিদের কাছে ‘মিষ্টি মা’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী অলকানন্দ রায় বলেন, বন্দিরাও কোন না কোন মায়ের সন্তান। সমাজে দূর্র্ধষ প্রকৃতির অপরাধীর সংখ্যা কম। বেশীরভাগই সাধারণ মাপের অপরাধী। সাধারণ অপরাধ করে যারা জেলে যায়, তাদের কাছে জেলখানা ভীষণ কষ্টের। এসব অপরাধীদের মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব। লঘু অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের অধিকাংশই দরিদ্র। কারাবন্দি এসব অপরাধীদের পরিবার নানাভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের কাছ থেকে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়। নানা অভাব অনটনে তাদের পরিবার রীতিমত হুমকির মুখে পড়ে। সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের পরিবারের নিরাপরাধ সদস্যরাও সমাজের কাছে মারাত্মকভাবে বঞ্চনার শিকার হয়। যেটি ন্যায়সঙ্গত নয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকায় অনেক সময়ই বন্দিরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। খাবার থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কারাগারে বন্দিরা যাতে বিধি মোতাবেক সব সুযোগ সুবিধা পায় এজন্য সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেডক্রস কারাগারে বন্দিদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কারাগারে অধিক বন্দি সমস্যাসহ অন্যান্য অনেক সমস্যা দুর করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *