ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা শহরের যেকোনো জায়গায় ফুটপাতের প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে থাকে কয়েকটি গোষ্ঠী। এলাকাভেদে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশ কেউই চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই। হকারদের দাবি, কেবল ফুটপাত থেকে দৈনিক চাঁদাবাজির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করেন শেরেবাংলা নগর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। তার হয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তোলেন ‘লাইনম্যান’ পদধারী ইলিয়াস ও হারুন।
দোকান নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে কথা হয় ইলিয়াস ও হারুনের সঙ্গে। এ ব্যাপারে ইলিয়াস জানান, একটি জুতার দোকানের জন্য দৈনিক ৩০০, কাপড়ের দোকানের জন্য ৪০০, চা-সিগারেটের দোকানের জন্য ২০০ টাকা দিতে হয়। আর দোকান বরাদ্দ পেতে জামানত হিসেবে দিতে হয় ৫ থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে হারুন জানান, যুবলীগ নেতা শাহ আলমই ফার্মগেট এলাকার পুরো বিষয়টি দেখেন। পুলিশ টাকা নেয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ, নেতা সবাই টাকা খায়। কিন্তু নামডা পুলিশের একটু বেশি হয়। আর ডিসি থেকে শুরু করে ওপরের অফিসারদের পুলিশই ম্যানেজ করে।’
যদিও এসব চাঁদাবাজির ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না ফার্মগেট এলাকার কোনো হকার। এতে উল্টো ব্যবসা করার জায়গাটি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, এখানে দুই ধরনের লাইনম্যান আছে। এক গ্র“প আসে পুলিশের পক্ষ থেকে। আরেক গ্র“প চাঁদা তোলে স্থানীয় নেতাদের পক্ষে। এতে দোকান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ টাকা চাদা দিতে হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ আলম বলেন, ‘ফার্মগেটে ২০০৭ সালের পর থেকে সব চান্দাবাজি বন্ধ। এখন কেউ হকারের কাছ থেকে টাকা নিলে তার জান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে। আমরা কাজকর্ম করে খাই, অনেক ভালো আছি।’ তবে শামসু আর কামাল নামে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী ফার্মগেট ওভারব্রিজের পূর্ব পাশের জায়গা থেকে কিছু টাকা ওঠায় বলে দাবি করেন তিনি।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মো. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ফার্মগেটের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ায় সঙ্গে শেরেবাংলা নগর থানার কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত নয়। কেউ অভিযোগ করে থাকলে তা পুরোপুরি মিথ্যা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকবার হকারদের তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। যোগাযোগমন্ত্রীও কয়েক দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিউমার্কেট এলাকার একটি অংশের চাঁদা তোলেন ছাত্তার মোল্লা, মোর্শেদ, মতিঝিলের শহীদ, বাবুল, শাহবাগ এলাকার ইসমাইল ও রিয়াজউদ্দীন। আর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে চাঁদা নেয় আনোয়ার। এভাবে ঢাকার প্রতিটি জায়গায় টাকা তোলার জন্য নির্দিষ্ট ‘লাইনম্যান’ কাজ করে। ক্ষমতাসীন দলের কোনো না কোনো নেতার ছত্রছায়ায় তারা চাঁদা তোলে। আর চাঁদার ভাগ ঠিকঠাক পৌঁছে যায় নেতা ও পুলিশের কাছে।
হকারদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেমের দাবি, ‘ঢাকা শহরের ২ লাখ ৫০ হাজার হকার দ্বারা প্রায় দেড় লাখ ভাসমান দোকান পরিচালিত হয়। আর দেড় লাখ দোকান থেকে স্থানীয় মাস্তান, লাইনম্যান ও পুলিশের দৈনিক চাঁদাবাজির পরিমাণ ২ থেকে ৩ কোটি টাকা।’
পল্টন মডেল থানার ওসি মোর্শেদ আলম বলেন, ‘সরকার নির্দেশনা দিলে যেকোনো সময় ফুটপাতের দোকান সরিয়ে দিতে পারি। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন থেকে ফুটপাত উচ্ছেদে আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। নয়াপল্টনে কোনো দোকান না থাকলেও পুরানা পল্টনে অনেক আগে থেকেই হকাররা ফুটপাতে বসছে।’
ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজধানীর সব জায়গাতেই আছে শাহ আলমের মতো এক বা একাধিক ব্যক্তি। যারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে এভাবে চাঁদা আদায় করছে নিয়মিত। যার ভাগ পেয়ে আসছে পুলিশও।