দেশ ছাড়তে পারবেন না ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী। তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ মৌখিকভাবে ইমিগ্রেশন ও সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবহিত করেছেন।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যার ঘটনায় নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। নিজাম হাজারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তার পাশাপাশি ফেনী আওয়ামী লীগের আরেক আলোচিত ব্যক্তি জয়নাল হাজারীকেও যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। তিনিও যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছে পুলিশ।
এই দুই নেতা ছাড়াও ফেনী আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
একরাম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে ফেনীসহ সারা দেশে। আদৌ তারা গ্রেপ্তার হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
নিজাম হাজারীকে গ্রেপ্তার করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ থেকে জোর দাবি ওঠায় টনক নড়েছে সরকারের ওপর মহলেও।
এছাড়া হত্যার পরিকল্পনাকারী বলে সন্দেহভাজন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিস্টার গ্রেপ্তার না হওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এমপি ও পুলিশের সহায়তায় এই দুজনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী বলেন, “একরামের খুনি ও পরিকল্পনাকারীদের ধরতে নিরলসভাবে কাজ করছে পুলিশ। পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। যাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে, সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “স্থানীয় এমপি নিজাম হাজারীসহ আরো কয়েকজন যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারেন সে জন্য মৌখিকভাবে বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ এলে তাকেসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “নিজাম হাজারীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ। এখনো সেই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয় বলেছে, নিজাম হাজারী যেহেতু সংসদ সদস্য, তাই সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।”
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, “নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে সেগুলো তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। রিমান্ডে থাকা আসামিরাও তার সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছেন।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাজারিকা পত্রিকায় একরাম হত্যার ব্যাপারে আগাম তথ্য কিভাবে ছাপা হয়েছে, সেই জন্য জয়নাল হাজারীকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হবে। তিনি যাতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে না পারেন, সেই জন্য ইমিগ্রেশন এলাকায় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”